Miscellaneous

সংবিধান কথনঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অন্যান্য

Written by: এস এম নাহিয়ান

28-11-2024

সংবিধান কথনঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অন্যান্য


সংবিধানকে বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। সরকার নির্বাচন, আইন জারি, শাসন ও বিচার বিভাগের গঠন, ইত্যাদি মৌলিক বিষয় সম্পর্কিত সামষ্টিক নিয়ম বা মূলনীতিই হলো সংবিধান। যেকোনো দেশের প্রেক্ষিতেই সংবিধান সে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্যান্য সকল আইনে যাই থাকুক না কেন, তা যদি সংবিধান বিরোধী হয়ে থাকে তবে আইনের সে সংবিধান বিরোধী অংশ বাতিল বলে গণ্য হয়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।


রাষ্ট্র পরিচালনার ক্রান্তিলগ্ন সমূহে সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। বাংলাদেশ এখন ঠিক তেমনই একটি সময় পার করছে। গত ৫ আগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজিরবিহীন দেশ ত্যাগের পরে রাষ্ট্র কাঠামোর পরিচালনাই হয়ে পড়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সে প্রেক্ষিতে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে যার বয়স তিন মাসের অধিক। তবে সংবিধানের কোন কোন ধারার ভিত্তিতে এ সরকার গঠিত হলো, সে নিয়ে কিছু দ্বিধা হয়তো অনেকের মনে আছে।


তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার 

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী 

বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলতে কোনো পরিভাষা নেই। তবে এর কাছাকাছি হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে গণ্য করা যায়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রথমবারের মতো দেওয়া হয় ১৯৯৬ সালের ২৬শে মার্চ। উদ্দীপনার বিষয় হলো, সে সময় এর পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করা রাজনৈতিক দলটি ছিল আওয়ামী লীগ। 


চিত্রঃ ১৯৯৬ এর আন্দোলনে দৈনিক আজাদ পত্রিকার পেপারকাটিং 


পঞ্চদশ সংশোধনী

কিন্তু ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্ববর্তী ত্রয়োদশ সংশোধনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে বাতিল করা হয়। সেখানেও মূখ্য ভূমিকা রাখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ফলে বর্তমান সংবিধান অনুসারে, কোনো ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নেই। 


একাদশ সংশোধনী 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ন্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়টিও বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সে সময় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ ও বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের সকল কার্যকলাপের বৈধতা আনয়নের জন্য ১৯৯১ এর ৬ আগস্ট তারিখেই গৃহীত হয় একাদশ সংশোধনী। এর মাধ্যমে তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈধতা প্রদান করে সংসদ। 


বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থাপনের ক্ষেত্রেও কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এ উদাহরণ টেনেছেন। কিন্তু উল্লেখ্য যে, একাদশ সংশোধনীতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের কার্যকলাপের বৈধতা দান করা হলেও, ভবিষ্যতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে কিছু বলা হয় নি। 


চিত্রঃ বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ এর শপথগ্রহণ 


যেভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রপরিচালনার মৌলিক নিয়মের একটি সামষ্টিক রুপ, তাই এটি পঠনের ক্ষেত্রেও সামষ্টিক নীতি অনুসরণ করা জরুরী। অর্থাৎ সংবিধানের কোনো একটি অনুচ্ছেদ বিচ্ছিন্ন ভাবে পাঠ করা উচিত নয়। বরং বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে সংবিধান থাকা প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ সমূহের একটি সামগ্রিক আলোচনা জরুরী। তারই প্রেক্ষিতে লেখার এ অংশে প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ ও তার সরল ব্যাখ্যাসমূহ তুলে ধরা হলো। 


অনুচ্ছেদ ৭ - সংবিধানের প্রাধান্য

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুসারে “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে”। আবার ৭(২) অনুসারে “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন…”। 


অর্থাৎ অনুচ্ছেদ ৭ অনুসারে প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতা জনগণের উপর ন্যাস্ত। এছাড়াও সংবিধানকে মূলত জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেহেতু জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায়ের নজিরবিহীন প্রতিফলন ঘটেছে, সেহেতু উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দেওয়া বাঞ্ছনীয়।


চিত্রঃ গণভবনের ছাদে জনগণ 


অনুচ্ছেদ ৪৮ - রাষ্ট্রপতি 

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) অনুসারে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যাতীত অন্য সকল দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। এছাড়াও অনুচ্ছেদ ৭২ অনুযায়ী সংসদ ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ব্যাতীত সংসদ ভাঙা আদৌ বৈধ কি না সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


কিন্তু আবার অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুযায়ী শর্ত থাকে যে, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করেছেন কি না এবং করে থাকলে কি পরামর্শ দান করেছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না”। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো কি হয় নি, সে প্রশ্ন তোলার এখতিয়ারই কারও নেই। তবে এ বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের একটি বিষয় চলে আসে, যা পরবর্তীতে আলোচ্য। 


অনুচ্ছেদ ৫৭ - প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ 

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদের  ৫৭(১) এর ‘ক’ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন তবে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য বলে গণ্য হবে। ৫ই আগস্ট পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এর বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। 


চিত্রঃ দেশত্যাগের সময় শেখ হাসিনা 


অনুচ্ছেদ ৫৮ - অন্যান্য মন্ত্রীর পদের মেয়াদ

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ (৪) প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের সাথে সাথে মন্ত্রীদিগের পদের অবসানও যে ঘটেছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। 


কিন্তু অনুচ্ছেদ ৫৭ ও ৫৮, দুইটি অনুসারেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীগণ তাদের উত্তরসূরী দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি স্ব স্ব পদে বহল থাকতে পারবেন। কিন্তু বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেশেই অবস্থান করেন নি। একই সাথে বিশাল সংখ্যক দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণও দেশত্যাগ করেছেন। এক্ষেত্রে উত্তরসূরী নির্বাচনের আগ অবধি তাদের স্ব স্ব পদে বহাল রাখার কোনো বাস্তব সুযোগ ছিল না। এছাড়াও এ ধরনের বিশেষ ক্ষেত্রে ‘পোস্ট ভ্যালিডিটি’ এর মাধ্যমে অর্থাৎ পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এমতাবস্থাকে বৈধতা প্রদানের সুযোগ রয়েছে। 


অনুচ্ছেদ ৯৩ - অধ্যাদেশ প্রণয়ন-ক্ষমতা

সংবিধানের ৯৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া  অবস্থায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনবোধে আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা রাখেন। তবে এই অনুচ্ছেদের ২ নং উপ-অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘কোন অধ্যাদেশ জারী হইবার পর অনুষ্ঠিত সংসদের প্রথম বৈঠকে তাহা উপস্থাপিত হইবে এবং ইতঃপূর্বে বাতিল না হইয়া থাকিলে অধ্যাদেশটি অনুরূপভাবে উপস্থাপনের পর ত্রিশ দিন অতিবাহিত হইলে কিংবা অনুরূপ মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার পূর্বে তাহা অননুমোদন করিয়া সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হইলে অধ্যাদেশটির কার্যকরতা লোপ পাইবে।’


সহজ ভাষায় বলা যায়, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশনে উপস্থাপনযোগ্য। এক্ষেত্রে সংসদ অধ্যাদেশের অনুমোদন অথবা অননুমোদন দেবে। অননুমোদন দিলে তা বাতিল হয়ে যাবে। আবার যদি সংসদ এ ব্যাপারে অনুমোদন বা অননুমোদন কোনটিই না দেয়, সেক্ষেত্রে ৩০ দিন অতিবাহিত হলেই অধ্যাদেশটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। 


‘অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪'

যেহেতু দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং আইনী ভাবে এর স্বীকৃতি দানের জন্য প্রয়োজনীয় সংসদ দেশে বিদ্যমান নেই, তাই রাষ্ট্রপতির উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ জারিই সবচেয়ে সঠিক প্রক্রিয়া। 


এরই প্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর  ‘অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪' খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা সহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন কোন শর্ত মেনে উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। 


চিত্রঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণ 


তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন তা নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি। বরং যে তারিখে পরবর্তী নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, সে তারিখ অবধি অন্তর্বর্তী সরকার বহাল থাকবে। এছাড়া ঠিক কতজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া যাবে তাও বেঁধে দেওয়া হয় নি। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার বিবেচনাই প্রাধান্য পাবে। এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো অন্তর্বর্তী সরকারের সকল কাজের বৈধতা প্রদানের বিষয়টি। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের অন্য কোনো আদালতে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। এমনকি যদি অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে ত্রুটি থাকে, তার জন্য তাদের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহও পরবর্তীতে অবৈধ হবে না।


এ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের সকল কার্যকলাপকেই নিরুংকুশ বৈধতা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি ‘অন্তর্বর্তী সরকার বৈধ কি না?’, সে প্রশ্নটিই অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। এই অধ্যাদেশটি এখন গেজেট আকারে জারি হওয়ার অপেক্ষায় আছে। তবে উল্লেখ্য যে, খোদ এই অধ্যাদেশের বৈধতা বজায় রাখার জন্য আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদের ভোটের প্রয়োজন পড়বে। 


অনুচ্ছেদ ১০৬ - সুপ্রীম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৬ অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের বিশেষ উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার বিদ্যমান। এ উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের প্রতিফলন ঘটেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে। প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করায় ও তার পরামর্শ অনুযায়ী সংসদ ভাঙ্গার সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সংসদ ভেঙ্গে যায়। যা নিজেই একটি ‘পোস্ট ভ্যালিডিটি’ এর বিষয়। 


চিত্রঃ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট


তবে এমন পরিস্থিতিতে অনুচ্ছেদ ১০৬ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের কাছ থেকে উপদেশ নিতে পারেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এর বক্তব্য অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে লিখিত বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় ভার্চুয়াল মিটিং এর মাধ্যমে এ সুনানি বসে। সুপ্রিম কোর্টের এ পরামর্শের প্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। 


মূলত সংবিধানের এই কয়টি অনুচ্ছেদের এইরুপ ব্যাখ্যার মাধ্যমেই গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 


সংবিধান সংশোধন ও নতুন সংবিধান 

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটি নিয়ে গুঞ্জন চলছে, তা হলো সংবিধান পরিবর্তন। এক্ষেত্রে পরিবর্তন বলতে কেউ কেউ বলছেন সংবিধান সংশোধনের কথা। কেউ কেউ বলছেন নতুন সংবিধানের কথা। 


কিন্তু বাস্তবতা হলো, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংশোধনের সার্বিক ক্ষমতা রাখে না। এক্ষেত্রে তারা যা করতে পারে, তা হলো সংবিধান সংশোধনের জন্য বিলটি উথাপন করা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২ অনুযায়ী ‘সংসদের আইন-দ্বারা এই সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবে’। অর্থাৎ সংবিধান সংশোধনের জন্য নির্বাচিত সংসদ বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে বিলটি গৃহীত হলে তবেই তা রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরিত হবে। উপস্থাপনের ৭ দিনের মাথায় বিলটিতে সম্মতি প্রদান না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্মতিদান করেছেন বলে গৃহীত হবে। মোদ্দা কথা হলো, সংবিধান সংশোধন করতে নির্বাচিত সংসদ লাগবে। 


চিত্রঃ জাতীয় সংসদ 


আবার যদি সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান আনয়নের প্রক্রিয়াতে কেউ যেতে চায়, সেক্ষেত্রে সংসদের উপস্থিতিও পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এটি দুষ্পরিবর্তনীয়। সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান স্থাপন করতে গেলে তার জন্য প্রয়োজন হবে রেফারেন্ডাম। এ প্রক্রিয়ায় সংসদের ভোট নয়, গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধান আনতে হবে। 


শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধানে সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান না থাকলেও, বিভিন্ন ধারার ব্যখ্যা ও বিশেষ পরিস্থিতির ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই পুরো প্রক্রিয়াটিকেই বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। তবে সংবিধান সংশোধন কিংবা নতুন সংবিধান আনয়নের এখতিয়ার শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সংসদ অথবা জনগণেরই রয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি একটি নজিরবিহীন ও ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে।  


তথ্যসূত্র 

১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

২। দৈনিক আমাদের সময়

৩। ঢাকা টাইমস 

৪। ভোরের কাগজ 

৫। বিবিসি বাংলা 

৬। বাংলা ট্রিবিউন 

৭। ডয়েচ ওয়েল 

৮। যুগান্তর 

৯। বণিকবার্তা 

১০। বাংলা ট্রিবিউন (২) 
১১। ডেইলি স্টার 

Previous Post

Next Post

Related Posts

শিশুদের প্রিয় কার্টুন সিরিজ এবং আধুনিক বিনোদনের নতুন...

20-11-2024

Miscellaneous

শিশুদের প্রিয় কার্টুন সিরিজ এবং আধুনিক বিনোদনের নতুন...

শিশুদের মনোরঞ্জন এবং শেখার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হল...

Read More
বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের বৈচিত্র্য, একাল-সেকাল ও...

31-10-2024

Miscellaneous

বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের বৈচিত্র্য, একাল-সেকাল ও...

বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...

Read More
ব্রেন ড্রেইন ঠেকাতে উদ্যোক্তারা কী ভূমিকা রাখতে পারেন?

22-10-2024

Miscellaneous

ব্রেন ড্রেইন ঠেকাতে উদ্যোক্তারা কী ভূমিকা রাখতে পারেন?

ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ,...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter