Home » MAWblog » Miscellaneous » ব্রেন ড্রেইন ঠেকাতে উদ্যোক্তারা কী ভূমিকা রাখতে পারেন?
Miscellaneous
22-10-2024
ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ, মেধাবী, এবং উচ্চতর শিক্ষিত পেশাজীবীরা তাদের নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশে উচ্চতর চাকরি বা উন্নত জীবনের সন্ধানে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেধাবীদের দেশত্যাগ দেশের মানবসম্পদ হ্রাস করে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।
এই পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা ব্রেন ড্রেইন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে, মেধাবীদের ধরে রাখতে, এবং দেশেই উদ্ভাবন এবং নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা বাড়াতে সক্ষম। এই ব্লগে আলোচনা করা হবে, কীভাবে উদ্যোক্তারা ব্রেন ড্রেইন ঠেকানোর জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ব্রেন ড্রেইনের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, চাকরির অভাব, প্রতিযোগিতামূলক বেতন কাঠামো না থাকা, এবং পেশাদার উন্নতির জন্য সীমিত সুযোগ অন্যতম প্রধান কারণ। মেধাবী ব্যক্তিরা দেশে যথাযথ সম্মান, সুযোগ, এবং আর্থিক নিরাপত্তা না পাওয়ায় তারা বিদেশে যেতে বাধ্য হন।
১। উন্নত বেতন এবং সুবিধা
২। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ
৩। মানসম্মত জীবনযাপনের সুবিধা
৪। গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব
উদ্যোক্তারা দেশেই নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করে মেধাবীদের ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারেন। একটি সফল স্টার্টআপ বা কোম্পানি মেধাবী ব্যক্তিদের জন্য দেশের মধ্যে ভালো কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এর ফলে, তারা বিদেশে না গিয়ে দেশেই থেকে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হবে।
উদ্যোক্তারা বিশেষত প্রযুক্তি, ফিনটেক, এডুটেক, এবং হেলথটেকের মতো খাতে নতুন উদ্যোগ নিয়ে আসতে পারেন, যেখানে দেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্ম কাজ করার সুযোগ পাবে।
ব্রেন ড্রেইনের একটি বড় কারণ হল বিদেশের প্রতিযোগিতামূলক বেতন কাঠামো। উদ্যোক্তারা দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক বেতন কাঠামো এবং কর্মচারীদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে ব্রেন ড্রেইন রোধ করতে পারেন।
মেধাবী কর্মীদের দেশে ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের উচিত হবে:
১। আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো তৈরি করা
২। কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা, বোনাস, এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা
৩। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উন্নতির সুযোগ তৈরি করা
মেধাবী ব্যক্তিদের ধরে রাখার জন্য দেশের মধ্যে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের সুযোগ বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তারা তাদের কোম্পানিতে উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন। তারা গবেষণায় বিনিয়োগ করে এবং নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে তরুণদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারেন।
দেশের মধ্যে উদ্ভাবন এবং গবেষণার সুযোগ বাড়ালে মেধাবীরা বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে দেশেই থেকে নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
উদ্যোক্তারা দেশের মধ্যে একটি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরি করে মেধাবীদের ধরে রাখতে পারেন। নতুন উদ্যোগ এবং স্টার্টআপে বিনিয়োগের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে কাজে লাগাতে পারেন।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সফল স্টার্টআপ রয়েছে, যেমন bKash, Pathao, এবং Chaldal, যারা তরুণ প্রজন্মকে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং নতুন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। এই ধরনের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের প্রসার মেধাবীদের দেশেই রেখে দিতে সহায়ক হবে।
উদ্যোক্তারা দেশের কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়িয়ে এবং কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে ব্রেন ড্রেইন ঠেকাতে পারেন। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীরা দেশেই নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হবে এবং বিদেশে যেতে হবে না।
উদ্যোক্তারা যদি তাদের কর্মীদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার শেখায়, বিশেষ করে আইটি, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা সায়েন্স, এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ প্রদান করে, তবে কর্মীরা বিদেশে না গিয়ে দেশেই কাজ করার সুযোগ পাবেন।
কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা মেধাবীদের ধরে রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মচারীদের জন্য সহানুভূতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। একটি উদার এবং সহায়ক কর্মপরিবেশ কর্মীদের আরও দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের বিদেশে পাড়ি দেওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
ব্রেন ড্রেইন ঠেকাতে উদ্যোক্তারা সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারেন। উদ্যোক্তারা সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেলে এবং সরকারি নীতিমালা মেধাবী কর্মীদের জন্য সহায়ক হয়, তবে তা দেশের মধ্যে মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখার জন্য কার্যকর হতে পারে।
উদ্যোক্তাদের উচিত হবে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি করে দেশীয় মেধাবী কর্মীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা।
bKash বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেক্টরে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। তারা তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, যারা দেশের ফিনটেক খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। bKash এর প্রতিযোগিতামূলক বেতন কাঠামো এবং উদ্ভাবনী কাজের পরিবেশ দেশের মেধাবীদের ধরে রাখতে সহায়ক হয়েছে।
Grameenphone দেশের বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানি হিসেবে প্রযুক্তি এবং উন্নয়নশীল প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলেছে। তারা দেশের তরুণদের প্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি করে বিদেশে যাওয়ার চাহিদা কমিয়ে এনেছে।
Pathao রাইড শেয়ারিং এবং লজিস্টিক সেক্টরে কর্মসংস্থান তৈরি করে হাজার হাজার তরুণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে। তাদের উদ্ভাবনী ব্যবসার মডেল এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার ফলে অনেক মেধাবী ব্যক্তি দেশে থেকেই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেয়েছে।
ব্রেন ড্রেইন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও উদ্যোক্তারা এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্ভাবন ও গবেষণার সুযোগ, এবং প্রতিযোগিতামূলক বেতন কাঠামো প্রদান করে উদ্যোক্তারা দেশের মেধাবীদের ধরে রাখতে পারেন। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা গেলে দেশ থেকে মেধাবীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে।
দেশে যদি উদ্ভাবনের সংস্কৃতি, কর্মক্ষেত্রে উন্নয়নের সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকে, তবে মেধাবী ব্যক্তিরা দেশেই থেকে তাদের কর্মজীবন গড়তে আগ্রহী হবে এবং দেশ থেকে ব্রেন ড্রেইন কমে যাবে।
31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read More30-09-2024
Miscellaneous
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ,...
Read More26-09-2024
Miscellaneous
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.