International

মধ্য প্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনাঃ যে প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে

Written by: এস এম নাহিয়ান

14-10-2024

মধ্য প্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনাঃ যে প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে


মধ্য প্রাচ্য। নাম শুনলেই যেন অগাধ ধন-সম্পদ, অফুরন্ত তেল, আর নিরন্তর যুদ্ধ, এই তিনটি জিনিসই এক ঝলকে মাথায় চলে আসে। আর প্রশ্ন যেখানে ইজরায়েল নামক রাষ্ট্রটিকে নিয়ে, সেখানে যুদ্ধের চিন্তা প্রথমে খেলাটাই স্বাভাবিক। মধ্য-প্রাচ্যে যে কয়টি বৃহৎ আকারের যুদ্ধ হয়েছে, তার প্রতিটিতেই ইজরায়েল সম্পৃক্ত। শুধু মধ্য প্রাচ্যের নয়, বরং পুরো বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে সহজেই আখ্যা দেওয়া যায় ইজরায়েলকে। এবং ২০২৪ সালে এসে শুরু হয়েছে নতুন যুদ্ধের জোরালো সম্ভাবনা। 

ইজরায়েল বনাম হামাসঃ গত এক বছর জুড়ে মধ্য-প্রাচ্যের অস্থিরতা

এ অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বাজাটা নতুন নয়। বস্তুত গত এক বছর ধরেই ইজরায়েলের সাথে নিয়মিত সংঘর্ষে লিপ্ত হামাস। বছর খানেক আগে এই অক্টোবর মাসেরই ৭ তারিখে ইজরায়েলের উপর প্রতিশোধ নিতে হামলা চালায় হামাস। সমসাময়িক সময়ে প্রথমবারের মতো ইজরায়েলের মূল ভূখন্ডের এত ভেতরে চলে আসতে সমর্থ হয় হামাস। সে সময় কয়েকদিনের জন্য অনেকটা বেকায়দায়ই পড়ে ইজরায়েল। 

প্যালেস্টাইনে প্রভাব

আর তারই নির্মম জবাব গত এক বছর ধরে দিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। আর মধ্য প্রাচ্য জুড়ে বর্তমান সহিংসতা এবং অস্থিরতার শুরু এখান থেকেই। গত এক বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে গাজা। আল-জাজিরার তথ্য মতে গত এক বছরে গাজাতেই মৃত্যু হয়েছে ৪১,৮৭০ জনের। প্রকৃত সংখ্যা হতে পারে এর থেকে অনেক বেশি। গাজায় চাকরি হারিয়েছে ৮০% মানুষ, পশ্চিম তীরে যা ২৪%। হেব্রনের ওল্ড সিটির প্রায় ৮০% ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে গাজার অর্থনীতি হারিয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। প্যালেস্টাইনের ছোট্ট অর্থনীতির জন্য যা বিশাল একটি সংখ্যা। অন্যদিকে পশ্চিম তীরের নাগরিকদের ইজরায়েলের কাজ নিষিদ্ধ হওয়ায় এ খাতেই ক্ষতি হয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ইউএনডিপি (UNDP) এর হিসেব মতে, সব মিলিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে প্যালেস্টাইন পিছিয়ে গেছে অন্তত ১১ থেকে ১৬ বছর। 


ইজরায়েলে প্রভাব

প্যালেস্টাইনের অর্থনৈতিক ধংস্বাবস্থা নিয়ে পৃথিবীর মোড়লদের তেমন মাথা ব্যথা না থাকলেও, ইজরায়েল নিয়ে ঠিকই আছে। কিন্তু এত সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার পরেও ইজরায়েল ক্ষতির মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত। শুধু মাত্র হামাসের সাথে যুদ্ধের কারণেই ইজরায়েলের অর্থনীতি থেকে গায়েব হয়েছে ৪০০ বিলিয়ন ডলার। তবে এসব অনেক পুরো হিসেব। বর্তমান হিসেবে পরিমাণটা হয়তো আরও অনেক বেশি। এছাড়াও বিনিয়োগ কমেছে ৬৭.৮%। আমদানি রপ্তানির পরিমাণ যথাক্রমে কমেছে ১৮.৩% ও ৪২%। বোঝাই যাচ্ছে বৈদিশিক মুদ্রা বাচাতে সব দিকের খরচ কমাতে চেয়েছে ইজরায়েল। একই সাথে তাদের দক্ষ জনশক্তির একটি বিশাল অংশ দেশ ছেড়েছে। 

বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রভাবটা বৈশ্বিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি পড়েছে পরিবহন খাতের মাধ্যমে। গাজাতে ইজরায়েলের ক্রমাগত হামলায় প্রতিবাদে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠীর মিসাইলের শিকার হতে থাকে ইজরায়েল ও এর বন্ধুরাষ্ট্রের পতাকা ধারী জাহাজগুলো। হাইজ্যাক হয় একটি ইজরায়েলী কার ক্যারিয়ার ভেসেল। মার্স্ক, এমএসসি এর মতো বড় বড় কোম্পানির জাহাজ মিসাইল হামলার শিকার হয়। হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন করেও কোনও লাভ হয় নি। অতঃপর জাহাজ গুলো পৃথিবীর ব্যস্ততম জাহাজের রুট এড়াতে শুরু করে। ফলস্বরুপ একেকটি জাহাজের তেলের খরচ বেড়ে যায় ২ থেকে ৩ লক্ষ ডলার। আর তারই প্রভাব পড়েছে পরিবহন খরচে। একেকটি কন্টেইনারের পরিবহন খরচ বেড়েছে ১ হাজার ডলারেরও অধিক। 

তবে পুরোনো কথা তো অনেক হলো। আশা করি সমস্যার শুরু এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে এতক্ষণে যথেষ্টই ধারনা হয়েছে। তাই চলুন ফেরত আসা যাক বর্তমান পরিস্থিতিতে। এবার আর কোনো গোষ্ঠীর সাথে নয়, সরাসরি ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধের যেই সম্ভাবনা উঠে এসেছে, তার ঠিক কি প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে? 

নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনাঃ ইজরায়েল বনাম ইরান 

বর্তমানে বাজতে থাকা যে যুদ্ধে দামামা, তাতে প্রথম ঘা কিন্তু লেগেছিলো গাজাতে ইজরায়েলী আগ্রাসন থেকেই। গাজায় আক্রমণের প্রতিবাদে হুথি বিদ্রোহীরা যেমন লোহিত সাগরে আক্রমণ করেছে, ঠিক তেমনই গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকেই হেজবুল্লাহ ইজরায়েলের উত্তরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইজরায়েলের সেবা ও দখলকৃত গোলান মালভূমিতে গত এক বছর জুড়েই হামলা চলমান। আর ইজরায়েল নিজের ঘরের ভেতর পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনার পর এবার নজর দিয়েছে বাইরে। তবে কিভাবে এত সমস্যার শুরু, তা বুঝতে হলে জানতে হবে হেজবুল্লাহ সম্পর্কে।  

হেজবুল্লাহঃ ইরানের প্রক্সি বাহিনী 

হেজবুল্লাহকে দমন করতে গিয়ে কেন ইরানের সাথে বিরোধ ইজরায়েলের? কারণ হেজবুল্লাহ মূলত ইরান সমর্থিত একটি শিয়া মিলিশিয়া এবং রাজনৈতিক গ্রুপ। তাদের কার্যক্রমের প্রধান ক্ষেত্র লেবাননে। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাসান নাসরাল্লাহ। হেজবুল্লাহ এর জন্ম ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ অবধি চলমান  লেবানিজ গৃহযুদ্ধের সময়। ২০০৯ সালে গ্রুপটি রাজনৈতিক ভাবে আরও যুক্ত হয়ে পড়ে।  

কিছুদিন আগে গত হওয়া হেজবুল্লাহ প্রধানের ২০২১ এর ভাষ্যমতে হেজবুল্লাহ এর প্রায় এক লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত যোদ্ধা আছে। যদিও পশ্চিমা থিংকট্যাঙ্ক ‘জেনস’ এর মতে সংখ্যাটি মূলত ২০ হাজার একটিভ ও ২০ হাজার রিজার্ভ সদস্য। এছাড়াও পশ্চিমাদের ধারনা অনুসারে হেজবুল্লাহ এর কাছে দেড় থেকে দুই লক্ষ নানা সক্ষমতার রকেট ছিল। সবমিলিয়ে এদের সক্ষমতা লেবানিজ সেনাবাহিনী থেকেও বেশি।   


কিন্তু এই শক্তিশালী হেজবুল্লাহ এর শত গোপনীয়তা সত্ত্বেও গত মাসের শেষের দিকে ইজরায়েলী গোয়েন্দাদের হাতে নিহত হতে শুরু করে একের পর একে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অতঃপর এসপিওনাজ ইতিহাসে আধুনিক যুগের সেরা হামলা চালায় মোসাদ। যোগাযোগ মাধ্যম সুরক্ষিত করতে ফোন ব্যবহার করতো না হেজবুল্লাহ। ব্যবহার শুরু করেছিলো পেজার। আর সেই পেজারের অর্ডার আউটসোর্স করে কোম্পানি থেকেই বসানো হয় বিস্ফোরক। আর সেই পেজারের তিন দফা বিস্ফোরণে পুরো হেজবুল্লাহ এক কথায় লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়।

এ ঘটনার আগেই এয়ার স্ট্রাইকের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছিল একের পর এক কর্মকর্তাকে। আর এ ঘটনার কিছুদিন পরেই এয়ার স্ট্রাইকে মারা পড়েন হাসান নাসরাল্লাহ। যিনি কিনা ছিলেন আয়াতুল্লাহ খোমেনির অত্যন্ত কাছের মিত্র। সব মিলিয়ে হেজবুল্লাহর উপরে এই ভয়াবহ আঘাত প্রকৃতপক্ষে ছিল ইরানের ভূরাজনৈতিক সক্ষমতার প্রতি আঘাত। 

ইরানের আক্রমণ 

ইজরায়েলের ভুখন্ডে ইরানের আক্রমণ নতুন কিছু নয়। গত ১৩ই এপ্রিল ড্রোন, লয়টারিং মিউনিশন, ব্যলিস্টিক মিসাইল মিলে প্রায় ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র বহর দিয়ে ইজরায়েলে হামলা চালায় ইরান। কিন্তু সে সময় মিসাইলের গতিপথ এবং সময় আগেই প্রকাশ করে দিয়েছিলো ইরান। তাই তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতিই হয় নি বলতে গেলে। কিন্তু তার এক মাস পরেই মে মাসের ১৯ তারিখে ইরানের রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় নিহত হন। ইরানের রাজধানী তেহরানে জুলাই মাসে হত্যা করা হয় হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়াকে। অতঃপর হেজবুল্লাহ এর কোমড় ভেঙ্গে দেওয়ার মতো এই জোরালো হামলা। সব মিলিয়ে ইরানের পক্ষে আর চুপ করে থাকা সম্ভব ছিল না। 


মূলত হেজবুল্লাহ এর উপর এই ভয়াবহ আক্রমণের প্রেক্ষিতে এক রকম বাধ্য হয়েই অক্টোবরের  ১ তারিখে হামলার সিধান্ত নেয় ইরান। এবার আর গত বারের মতো নয়, আক্ষরিক অর্থেই হামলা করে ইরান। ফলস্বরুপ প্রায় ৮০ ভাগের বেশি ব্যলিস্টিক মিসাইল ইজরায়েলী ভূমিতে আঘাত করে। অসংখ্য সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে ইরানের মিসাইল। বিশেষত নেভাথেম এয়ারবেজ প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সব মিলিয়ে কোনো যুদ্ধ চলা ছাড়া ইজরায়েলের ভূমিতে এটিই এখন অবধি সবচেয়ে বড় আঘাত বলা চলে। 

তবে আক্রমণ সহ্য করে নিশ্চুপ বসে থাকার মতো কোনো দেশ ইজরায়েল নয়। আক্রমণের পরের দিনই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন প্রতি-আক্রমণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান। 

যা যা ঘটেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে  

প্রশ্ন হলো, ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ অথবা অস্থিরতা, যাই হোক না কেন, তাতে বিশ্ববাসীর সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো বিশ্বের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়ে। এক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবেই বিশ্বের অনেক দেশ নাজেহাল। তাহলে মধ্য-প্রাচ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের যুদ্ধ আসলে ঠিক কি প্রভাব ফেলবে সে প্রশ্ন রয়েই যায়। 

তবে এখন অবধি খুব বড় অস্থিরতা তৈরি হয় নি বৈশ্বিক বাজারে। কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমনঃ 

ডলারের দাম বৃদ্ধি
বৈশ্বিক বাজারে ডলারের দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ডলার ইন্ডেক্স অনুসারে আমেরিকান ডলার গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এক্ষেত্রে ডলারের দাম ইউরো, ইয়েন এবং আরও চারটি শক্তিশালী কারেন্সির বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

তেলের দাম বৃদ্ধি
মধ্য প্রাচ্যে তেলের অস্থিরতা মানেই তেলের দাম বৃদ্ধি। তবে ইরান-ইজরায়েল সমস্যার আঁচ এখনও আন্তর্জাতিক বাজারে সেভাবে পৌছায় নি। আক্রমণ হওয়ার ২-৩ দিন পরে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২%। তবে এ দাম অচীরেই বৃদ্ধি পেতে পারে যদি ইজরায়েল ইরানের তেল উত্তোলন কেন্দ্র গুলোতে হামলা চালানোর সিধান্ত নেয়। ইরানের তেলের ক্রেতা মূলত চীন। এবং বিশ্ব বাজারে ইরানের শেয়ার এখন অবধি ৪%। যদি ইরানের তেল উৎপাদন ব্যহত হয় তাহলে তেলের দাম অবশ্যই বাড়বে। তবে কতটুকু বাড়বে তা নির্ভর করবে সৌদি আরব সহ অন্যান্য দেশ গুলো অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করতে পারছে কি না তার উপর। 

ব্যাংকিং খাতে প্রভাব
যেহেতু এখনও যুদ্ধ শুরু হয় নি, তাই ব্যাংকিং খাতে এখনও আহামরি প্রভাব পড়ে নি। তবে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি গার্ডিয়ানকে বলেছেন যে ব্যাংকটি মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমে গেলে সুদের হার কমাতে পারে। যেহেতু তারা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে তেমন চিন্তিত নন, এ থেকে ধারনা করা যায় যে, মধ্য প্রাচ্যের সংকটকে এখনও তারা খুব গুরতর মনে করছেন না।  

একই ধরনের ধারনা পোষণ করেছেন সুইডেনের রিস্কব্যাংক এর ডেপুটি গভর্নর পার জ্যানসন। তার মতেও মধ্য প্রাচ্য সংকট এখনও তেমন বড় কোনো সংকটে রুপ নেয় নি। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তথা আইএমএফ (IMF) এর মতে, মধ্য প্রাচ্যের সংকট বৃৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ থাকলেও এখনও তার প্রভাব আন্তর্জাতিক বাজারে পড়ে নি। অন্তত গত বছরের দামের তুলনায় এখনও অবধি দাম স্থিতিশীল আছে। 

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে যে প্রভাব পড়তে পারে 

আপাতত এইটুকু নিশ্চিত যে, ইরানের এক আক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুব বড় প্রভাব এখনও পড়ে নি। কিন্তু যদি ইজরায়েল এই আক্রমণের দাত-ভাঙা জবাব দেয়? আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধিতে মত্ত ইরানের জবাব তাহলে দিতেই হবে। আর এর মাধ্যমেই শুরু হতে পারে যুদ্ধ। যা ছড়িয়ে পড়তে পারে সম্পূর্ণ মধ্য প্রাচ্যে। এক্ষেত্রে যেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। 

তেল শিল্প 
ইরান বিশ্বের মাত্র ৪% তেল সরবরাহ করলেও ইরানের কাছেই অবস্থিত হরমুজ প্রণালী। আন্তর্জাতিক নানা সমস্যায় ইরান বারংবার হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যদিও কখনও পরিস্থিতিতে সে দিকে গড়ায় নি। কিন্তু ইরানে হামলা হলে অবশ্যই হাতের এই তাসটিকে কাজে লাগাবে। আর এতে করে বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর অন্তত ২০% তেল সরবরাহ। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে। 

এর বাইরে মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ গুলোতেও যদি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেসকল দেশের তেল উৎপাদনও ব্যাহত হবে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ ও তেল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম হয়েছিল আকাশচুম্বী। মধ্য প্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়ালে আবার সেরকম হওয়া অসম্ভব নয়। 

আন্তর্জাতিক পরিবহন 
আন্তর্জাতিক পরিবহন ইতোমধ্যে এ সমস্যার কারণে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরু হলে সুয়েজ, লোহিত সাগর, হরমুজ প্রণালী একত্রে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। ফলে খরচ বাড়বে সামগ্রিক পরিবহন খাতের। 

বিনিয়োগ 
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী অঞ্চল গুলোর মধ্যে মধ্য প্রাচ্য রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবক আরব বিশ্ব। এ সকল দেশে যেমন রয়েছে বাইরের দেশের প্রচুর বিনিয়োগ, তেমনই এসব দেশও বাইরের অনেক দেশে বিনিয়োগ  করে থাকে। সৌদি আরব, আরব আমিরাতের মতো দেশ গুলোর তেল বিক্রির টাকা বিনিয়োগ হয় সারা বিশ্বে। তাই এ অঞ্চলে যুদ্ধ মানে পুরো পৃথিবীর বিনিয়োগ বাজার ধংস্ব। 


শেষকথা 
পরিশেষে এইটুকু বলা যায়, মধ্য প্রাচ্যে যুদ্ধ হলে তার প্রভাব পোহাতে হবে না পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই। তবে শুধু ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ লাগার সম্ভাবনাই অনেকটা কম। কারণ দুটো দেশই তাদের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত। আবার যদি কখনো যুদ্ধ লেগেও যায়, তা পুরো মধ্য প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কম। কারণ মধ্য প্রাচ্যের সুন্নী দেশ গুলো শিয়া ইরানের জন্য রক্ত ঝড়াবে সে আশা না করাই শ্রেয়। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধ পুরো বিশ্বের অর্থনীতির জন্যই হবে কঠোর এক পরীক্ষা। 

Previous Post

Next Post

Related Posts

ট্রাম্পের জয়ঃ বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি নাকি আশংকা?

24-11-2024

International

ট্রাম্পের জয়ঃ বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি নাকি আশংকা?

আধুনিক পৃথিবীতে যে নির্বাচনটি বিশ্বের উপর সবচেয়ে বেশি...

Read More
বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সম্পর্কঃ অর্থনীতি...

21-11-2024

International

বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সম্পর্কঃ অর্থনীতি...

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বিশ্বের অন্যতম প্রধান...

Read More
মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার নেতৃত্ব এবং তার...

14-11-2024

International

মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার নেতৃত্ব এবং তার...

সত্য নাদেলা মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter