Home » MAWblog » Sustainable Development » দৈন্য সূচক ও বাংলাদেশঃ কোন আমলে কেমন ছিল এদেশের মানুষ
Sustainable Development
Written by: এস এম নাহিয়ান
30-06-2024
আপনি যদি একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে মনে একটি প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। আর তা হলো, কোন আমলে আপনি এবং আপনার পরিবার ঠিক কেমন সময় কাটিয়েছেন। স্মৃতির পাতা হাতড়ে হয়তো অনেক কিছুই মনে করা সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তির স্মৃতির উপর ভিত্তি করে আসলে একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তাই তো যুগে যুগে বিশ্বের নানা দেশে ক্রমাগত ব্যবহৃত হয়ে আসছে মিজারি ইন্ডেক্স। যার বাংলা করলে হয় ‘দৈন্য সূচক’। আর এই মিজারি ইন্ডেক্স তথা দৈন্য সূচকের মাধ্যমেই হিসেব করে দেখিয়ে দেওয়া যায়, একটি দেশে একজন সাধারণ নাগরিক কোন সময়ে ঠিক কেমন ছিলেন। আর আজকের লেখায় আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দৈন্য সূচকের মাধ্যমেই ফিরে দেখছি যুগে যুগে এদেশের মানুষের অবস্থান।
মিজারি ইন্ডেক্স অথবা দৈন্য সূচক হলো এমন এক ধরনের সূচক যার সাহায্যে নির্দিষ্ট সময়কালে একটি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক ঠিক কতটা দৈন্যদশার সম্মুখীন হয়েছেন তা নির্ধারণ করা হয়। এই সূচকের প্রথম প্রবর্তন ঘটে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ আর্থার মেলভিন ওকুন (Arthur Melvin Okun) এর হাত ধরে।
১৯৭০ এর দশকে আমেরিকার অর্থনীতি নানা চড়াই উতরাই পেরোনো সময় এই সূচকটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সূচকটির মূলনীতি হলো, কোনো দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের দৈন্যদশা সেই দেশটির বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতির হারের যোগফলের সমান।
পড়ুন-বাংলাদেশের ব্রেইন ড্রেইনঃ শুধুই কি মেধার পাচার নাকি সম্ভাবনার হাতছানি?
দৈন্য সূচকের মূলনীতি থেকেই এটি নির্ণয়ের উপায় সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। তবে আরও সহজ করে বোঝাতে গেলে এই সূচকটির অংশসমূহ নিয়ে একটু কথা বলা প্রয়োজন। মিজারি ইন্ডেক্স বা দৈন্য সূচক সাধারণত দুইটি জিনিসের যোগফল। বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতি। খুব স্বাভাবিক ভাবে এই দুইটির শতকরার হারকে যোগ করে দিলেই বের হয়ে যায় দৈন্য সূচক। আর এই সূচকটির মান যত বেশি, একজন সাধারণ নাগরিকের দৈন্যদশার পরিমাণ ততটাই বেশি।
সুতরাং, দৈন্য সূচকঃ বেকারত্বের হার + বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার
বাংলাদেশের দৈন্য সূচকের পরিমাপ শুরু ১৯৯১ সাল থেকে। কারণ দৈন্য সূচক নির্ণয় করতে যে দুই ধরনের উপাত্তের প্রয়োজন, তা বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকেই রেকর্ডকৃত। নিরপেক্ষতা রক্ষায় এ লেখায় ব্যবহৃত দুইটি উপাত্তই নেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ডাটা ব্যাংক থেকে। সে অনুযায়ী ১৯৯১ থেকে ২০২২ সাল অবধি বাংলাদেশে দৈন্য সূচকের চিত্রটা নিম্নরূপ।
১৯৯১ থেকে ২০২২, এই ৩১ বছরের দৈন্য সূচক বিবেচনা করলে সহজেই বোঝা যায় কোন সময়ে দৈন্য সূচক কেমন ছিল। আর তা থেকেই একটি ধারনা পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে সাধারণ জনগণের অবস্থান সম্পর্কে। তবে এই ধারনাটিকে আরও একটু পরিষ্কার করতে চাইলে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারসমূহ এবং তাদের শাসনকাল সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সেটিকেই সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে লেখার এই অংশে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকার প্রধানের শাসনকাল
বিভিন্ন শাসনামলে গড় দৈন্যসূচকের চিত্র
কোন আমলে কেমন ছিল মানুষ? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে একটি শাসনকালের বছরসমূহের দৈন্য সূচকের গড় বের করলেই একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়। তবে দৈন্য সূচকের হিসাব ১৯৯১ সাল থেকে হওয়ায় এর পূর্ববর্তী শাসনামল সমূহের গড় করার কোনো উপায় নেই। তবে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২২, এ সময়ের শাসনামল গুলোর গড় করলে নিচের চিত্রটি দেখতে পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে যদি আমরা আরেকটু সহজে বুঝতে চাই, তাহলে নিচের ছবিটির দিকে এক ঝলক তাকানোই যথেষ্ট। বার চার্টটির প্রতিটি কলাম একেক সরকারের আমলের গড় দৈন্য সূচককে নির্দেশ করছে।
এক্ষেত্রে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে, অনেক শাসনকালই শুরু হয়েছে অক্টোবর মাসে। অথবা শেষ হয়েছে জানুয়ারি মাসে। তাই এ সকল ক্ষেত্রেক পুরো বছরের দৈন্যসূচক গড় করাটা অযৌক্তিক। শাসনকাল গুলোর সাথে মিল রেখেই এই গড় দৈন্য সূচক গুলোর হিসাব করা হয়েছে।
দৈন্য সূচকের উথান-পতন
গড় সূচক গুলোর তাকালে বোঝা যাবে যে, ৯০ এর দশক থেকে বর্তমানে একজন সাধারণ নাগরিক অধিক দৈন্যদশায় আছেন। তবে এমন তুলনা এক রাজনৈতিক দলের সাথে অন্য দলের করার খুব বেশি সুযোগ নেই। কারণ ৯০ এর দশকে দুটো শাসনকালেই দৈন্য সূচক কাছাকাছি ছিল। একবিংশ শতাব্দীতে তা বেড়ে যায় ১০ এর ঘরে। এর সর্বোচ্চ উথান ঘটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সে সময় তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুই রাজনৈতিক প্রধানের কারাবাস এবং সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও বেকারত্ব অনেক বেড়ে যায়। ফলে গড় দৈন্য সূচকও অনেক বাড়ে। তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে ২০০৭-২০০৮ ছিল গ্রেট ডিপ্রেশনের পর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সে সময়টিই ছিল সর্বোচ্চ দৈন্য দশার সময়।
পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তা ১৩ এর ঘর থেকে নিম্নমুখী থাকে। তবে ২০১৯-২০২২ এর ভেতরে তা আবার উর্ধ্বমুখী হয়। এ সময় কোভিড-১৯ মহামারি ও আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতাও দৈন্য সূচকে বেশ ভূমিকা রেখেছিলো।
শেষকথা
তবে মোট কথা হলো ৯০ এর দশকে তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে দৈন্য সূচক অনেকটাই বেশি। এর পেছনে দায়ী করা যায় ক্রমাগত বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির হার ও বেকারত্ত্বের হারকে। একটি দেশের সকল নাগরিক কখনোই সমান ভাবে দারিদ্যের যন্ত্রণা অনুভব করেন না। বিশেষত বাংলাদেশে ধনী-গরীবের ব্যবধান যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন বাড়ছে। আ একটি দেশের লক্ষ্য হয়ে থাকে তার সাধারণ জনগণের জীবনের মান উন্নয়ন করা। কারণ তারাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চাইলে সময়ের সাথে সাথে নিম্নমুখী দৈন্য সূচক নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।
27-10-2024
Sustainable Development
ভারত নাকি চীন, বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক চিরন্তন টানা...
Read More27-10-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ গত কয়েক বছরে...
Read More29-09-2024
Sustainable Development
রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বজুড়ে...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.