Print World

Sustainable Development

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন

Written by: সুরাইয়া জামান

30-05-2024

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন


অনেকেই মনে করেন, ই-কমার্স ব্যবসা বলতে কিছু পণ্য স্টক করে ফেসবুকে তা লাইভ এর মাধ্যমে বিক্রি করে ফেললাম, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। বরং ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্র এবং পরিধি অনেক বড়। আজ আমরা এই লেখার মাধ্যমে কিভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা যায় তার পরিপূর্ণ গাইডলাইন সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। 


ই-কমার্স ব্যবসা কি?

ইলেক্ট্রনিক কমার্স নামেও পরিচিত ই-কমার্স ব্যবসা মূলত অনলাইনের মাধ্যমে অতি সহজেই কোনো সেবা বা পণ্য বা অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ, অনলাইনের মাধ্যমে যে ব্যবসা পরিচালিত হয়, তাই ই-কমার্স ব্যবসা। 

সহজ করে বলতে গেলে, এই যে আমরা অনলাইনে কেনাকাটা করছি এবং অপরপক্ষ আমাদের কাছে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আমাদের সাথে লেনদেন করছে, এটাই হচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসা।


ই-কমার্স ব্যবসা কত প্রকারের হতে পারে?

বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। প্রচলিত এবং জনপ্রিয় কিছু ধরন হচ্ছেঃ
- B2B ব্যবসা
- B2C ব্যবসা
- অ্যাফিলিয়েট ব্যবসা
- ওয়েব বিপণন
- গুগল এডওয়ার্ড বিপণন

সাধারনত ব্যবসায়ীর পছন্দ এবং পুঁজির উপর নির্ভর করে ই-কমার্স ব্যবসার এই ধরন নির্ধারিত হয়ে থাকে। 


ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর প্রস্তুতি

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে চাইলে প্রথমেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। শুরু করতে চাইলাম আর কিছু পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিলাম, সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তা চলুন, ব্যবসা শুরুর আগে কিছু প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।


আর্থিক এবং মানসিক প্রস্তুতি

পুঁজি হিসেবে আপনি যে অর্থ ব্যবসায়ে ইনভেস্ট করতে চাচ্ছেন, তা গুছিয়ে রাখুন। আনুষাঙ্গিক অন্যান্য খরচের জন্য কিছু অতিরিক্ত অর্থ হাতে রেখে দিন। মনে রাখবেন, শুধু পণ্য কেনাই কিন্তু এই ব্যবসায়ের মূল খরচ নয়, ই-কমার্স ব্যবসায়ে ভালো করতে হলে আপনার অন্যান্য আরো কিছু কাজ বাকি আছে। আর্থিক প্রস্তুতির পাশাপাশি এক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, আপনি কোনো সাধারণ দোকানে ব্যবসা করছেন না। অনলাইন ব্যবসা ২৪ ঘন্টাই চলমান থাকে। কাজেই ব্যবসায়ের শুরুতে মূলধনের পাশাপাশি আপনাকে যথেষ্ট সময় এবং শ্রম ইনভেস্ট করতে হবে। 


প্রোডাক্ট রিসার্চ

এবার আপনাকে ভাবতে হবে, আপনি কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান কিংবা কি ধরনের সেবা গ্রাহককে দিতে চান। এক্ষেত্রে আপনার শখ, আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতার জায়গা খুঁজে বের করুন। যেমন, কেউ ভালো ফেব্রিক চেনেন এবং মহিলাদের শাড়ির কাজ এবং ডিজাইন নিয়ে তার যথেষ্ট আগ্রহ আছে, সেক্ষেত্রে তিনি শাড়ির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসা তার জন্য সহজ হবে। কেউ ইলেক্ট্রিক্যাল গ্যাজেট খুব পছন্দ করে, তার জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেটের ব্যবসা শুরু করাটা সহজ হবে। এভাবেই নিজের আগ্রহের জায়গা থেকে পণ্য নির্বাচন করতে পারেন। এছাড়াও কসমেটিক্স ব্যবসা, জুতার ব্যবসা, খাবারের ব্যবসা, কাপড় সহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।


প্রতিষ্ঠানের নাম

পণ্য নির্বাচনের পর আপনার প্রাথমিক কাজ হবে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য যুতসই সুন্দর নাম নির্বাচন করা। সহজ, সুন্দর এবং ছোট্ট নাম নির্বাচন করতে হবে যেন গ্রাহকের তা মনে রাখতে সুবিধা হয় এবং তা যেন আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রতিচ্ছবি রিফ্লেক্ট করে।


মার্কেট রিসার্চ

যেকোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মার্কেট রিসার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা শুরুর আগে আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স, পণ্যের মূল্য, ক্রেতার কাছে পণ্যের চাহিদা, কম্পিটিটর, মার্কেট ল্যান্ডস্কেপ ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো মতো রিসার্চ করে নেওয়া প্রয়োজন। 



প্রোডাক্ট সোর্স

পণ্য কেনার জন্য পণ্যের সহজলভ্য সোর্সের খোঁজ করা খুবই জরুরি একটি ধাপ। আপনাকে যথেষ্ট মাথা খাটিয়ে খুঁজে বের করতে হবে এই সোর্সটি, যেখান থেকে আপনি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন খুবই অল্প মূল্যে। অনেক ই-কমার্স ব্যবসার সাথে তাল মিলিয়ে মার্কেটে টিকে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই অল্প মূল্যে পণ্য কেনার ব্যপারে নজর দিতে হবে। 


ওয়েবসাইট তৈরি

ই-কমার্স ব্যবসায়ে একটি সুন্দর, গোছানো ওয়েবসাইট থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, একটি যথাযথ গোছানো ওয়েবসাইট ই-কমার্স ব্যবসায়ে সফলতার মূল হাতিয়ার। তাই ডোমেইন হোস্টিং নির্বাচন এবং ক্রয় করে একজন এক্সপার্টের সাহায্য নিয়ে দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরী করে ফেলুন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ তৈরি

অনলাইন ব্যবসায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিজের পণ্যের পরিচিতি এবং প্রচার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ তৈরি খুবই জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এই কাজটি সম্পূর্ণ করে ফেলুন।


ফটোগ্রাফি

ই-কমার্স ব্যবসায়ে যেহেতু হাতে ধরে পণ্য দেখে কেনার সুযোগ নেই, তাই এই ব্যবসায়ে আপনার ক্রেতা আকৃষ্ট হবে পণ্যের মানসম্মত ছবি দেখে। ঘোলা, ফাটা, কোনোরকম করে তোলা ছবি দেখে ক্রেতা তা কিনতে তো আকৃষ্ট হয়ই না, বরং বিরক্ত হয়। তাই পণ্যের যথাযথ সুন্দর এবং নিখুঁত দেখতে লাগে এমন মানসম্মত ছবি তুলুন। 



পণ্যের মার্কেটিং

কথায় বলে, প্রচারেই প্রসার। আপনি সবদিক গুছিয়ে নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন কিন্তু যথাযথ মার্কেটিং এ পিছিয়ে রইলেন, তাহলে ক্রেতা আপনার ব্যবসা এবং পণ্য সম্পর্কে জানবে কি করে?

মার্কেটিং হচ্ছে ব্যবসায়ে সফলতার চাবিকাঠি। এটা মাথায় রেখে পণ্যের যথাযথ মার্কেটিং করুন। অর্গানিক মার্কেটিং এর পাশাপাশি পেইড মার্কেটিং ও করতে পারেন। নিজের বন্ধু, আত্মীয়, চেনাজানা সবাইকে নিজের ব্যবসা সম্পর্কে অতিবাহিত করুন এবং তাদেরকেও আপনার পণ্য সম্পর্কে মানুষকে জানাতে আগ্রহী করে তুলুন। এছাড়াও পণ্য নিয়ে বিভিন্ন সাইটে ব্লগ আর্টিকেল লিখতে পারেন। 


টিম তৈরি

পণ্য মার্কেটিং, প্যাকেজিং, পেইজ ম্যানেজ, কাস্টোমার ডিল করা, মেসেজের রিপ্লাই করা সব কিছু একা কারো দ্বারা সম্ভব নয়। তাই বেসিক কাজগুলো করবে এমন কিছু কর্মী প্রয়োজনানুসারে নিয়োগ দিন। সবাইকে কাজ বুঝিয়ে আন্তরিকতার সাথে একটি টিম তৈরি করুন। নিয়মিত সবাইকে কাজে আগ্রহী হতে উৎসাহ দিন। এতে আপনার ব্যবসায়িক কাজগুলো গোছানো থাকবে এবং আপনি বেনেফিটেড হবেন। 


ডেলিভারী সিস্টেম

কাস্টোমারের হাতে যথাযথ পণ্য ঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে আগে থেকেই ডেলিভারি সিস্টেম নিয়ে ভেবে রাখুন। বর্তমানে অনেক ডেলিভারী কোম্পানী ডোর-টু-ডোর সার্ভিস দিয়ে থাকে। কুরিয়ারের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভালো মানে কুরিয়ার সার্ভিস বেছে নিন। প্রোডাক্ট ট্র্যাকিং এর সুবিধা থাকলে তা নিশ্চিত করে আপনার ডেলিভারী সিস্টেমকে আরো সহজ এবং আধুনিক করে তুলতে পারেন। 

পেমেন্ট পদ্ধতি

অনলাইন কেনাকাটায় পেমেন্ট পদ্ধতি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। ক্রেতা পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করবে নাকি মূল্য এডভান্স করতে হবে তা ঠিক করে ক্রেতাকে আগেই তা অবহিত করুন। অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিকাশ, রকেট ইত্যাদি মাধ্যমের সাহায্য নিতে পারেন। তবে পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ অর্থাৎ ক্যাশ অন ডেলিভারী সিস্টেম বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। এতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুপক্ষই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

কাস্টোমার সাপোর্ট

ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কিছু অসাধু লোক ব্যবসায়ী সেজে অন্লাইনে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে থাকে। এসব এড়াতে এবং ক্রেতার নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে অর্ডারের আগে এবং পরে মানসম্মত কাস্টোমার সাপোর্টের ব্যবস্থা করুন।

ব্যবসার মূলনীতি অনুযায়ী, গ্রাহকই আপনার মূলধন- এটা মাথায় রেখে গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের রাস্তা যথাসম্ভব সুগম করে তুলুন। আপনার সার্ভিস এবং পণ্য তাদের কেমন লেগেছে, কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা ইত্যাদি খবরাখবর নিয়ে তাদের আশ্বস্ত করুন যে তাদের মতামত আপনার কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। 

পরিশেষ

আমাদের দেশ বিপুল সংখ্যক জনগণের দেশ হওয়ায় এখানে মানুষের চাহিদার শেষ নেই। সময়ের সাথে মানুষের চাহিদার ধরনও বদলাচ্ছে। তাই আপনি যদি ভালো সার্ভিস, ভালো পণ্য নিয়ে মার্কেটে আসতে পারেন এবং নিত্য নতুন পন্থায় মার্কেটিং করে মানুষের মাঝে আস্থা অর্জন করতে পারেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

তথ্যসূত্রঃ

Yappobd.com

Trinomulerjanala

Previous Post

Next Post

Related Posts

চীন নাকি ভারত? বাণিজ্য ও উন্নয়নের সমীকরণে কাকে বেছে নেবে...

27-10-2024

Sustainable Development

চীন নাকি ভারত? বাণিজ্য ও উন্নয়নের সমীকরণে কাকে বেছে নেবে...

ভারত নাকি চীন, বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক চিরন্তন টানা...

Read More
বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টেক স্টার্টআপ এবং তাদের সাফল্যের...

27-10-2024

Sustainable Development

বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টেক স্টার্টআপ এবং তাদের সাফল্যের...

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ গত কয়েক বছরে...

Read More
রোবটিক্স এবং এআই: কীভাবে প্রযুক্তি বাংলাদেশকে বদলে...

29-09-2024

Sustainable Development

রোবটিক্স এবং এআই: কীভাবে প্রযুক্তি বাংলাদেশকে বদলে...

রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বজুড়ে...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter