Community
Written by: সুরাইয়া জামান
26-04-2024
ঋতুর পালাবদলে বছর ঘুরে আবারো চলে এসেছে গ্রীষ্মকাল। বাংলা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিভিন্ন সুমিষ্ট দেশীয় ফলের পসরা এবং কালবৈশাখী ঝড় নিয়ে এই ঋতুর আগমন ঘটে। তবে মধুময় এই মাস শুধু যে আম-কাঁঠালের সুঘ্রাণ বয়ে নিয়ে আসে তা নয়। এসময়ে বাইরের প্রচন্ড তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠে। পর্যাপ্ত বনায়নের অভাব এবং সময়ের সাথে বিভিন্ন নদী-নালা ভরাটের কারণে দিনদিন এই তাপপ্রবাহের মাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে পশু-পাখি থেকে শুরু করে জন-জীবন পড়ছে হুমকির মুখে। বিভিন্ন বয়স এবং পেশার মানুষ গরমজনিত কারনে বিভিন্নভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জাতীয়ভাবে হিট এলার্ট জারি করলেও এ সময়ে নিজে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে দরকার বাড়তি সতর্কতা। বাহ্যিক সতর্কতার পাশাপাশি খাদ্যাভাসের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। তবে জেনে নেওয়া যাক, গ্রীষ্মের এই মরণঘাতী গরমে সুস্থ থাকতে আমাদের যেসব খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে।
বিভিন্ন কাজে দূরে কোথাও যেতে হলে কিংবা ঘুরতে গেলে প্রয়োজনীয় যে জিনিসগুলো সাথে রাখা উচিত তা জানতে পড়ুন- ভ্রমণের আগে যে জিনিসগুলো সাথে নিতে ভুলবেন না
তরল জাতীয় খাবার
তীব্র গরমে ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে পানি এবং লবন বের হয়ে যায়। এছাড়াও প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে অথবা পরিশ্রমের কাজ করলে অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের হবার সম্ভাবনা থাকে। ফলে শরীরে পানিশূণ্যতার কারনে ডায়রিয়া এবং হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এসময়ে যেকোনো বয়েসী মানুষের বিশুদ্ধ পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। খাবার পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, সিজনাল বিভিন্ন ফলের ফ্রেশ জুস, লেমনেড ইত্যাদি তরল পান করা যেতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম হলে বারে বারে স্যালাইনের পানি খাওয়া উচিত। এতে শরীরে পানির ঘাটতি হবার সম্ভাবনা কমে যায় এবং সুস্থ থাকা যায়। তবে ঠান্ডা সফট ড্রিংকস জাতীয় তরল একেবারেই গ্রহণ করা উচিত নয়। এসব পানে তৎক্ষণাৎ আরাম পাওয়া গেলেও এসব শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের করে নেয়।
টক দই
গরমে সুস্থ থাকতে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে টক দই খাওয়া খুবই উপকারী। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এই দুগ্ধজাত খাবার খেলে নিমিষেই শরীর শীতল হয়ে যায়। টক দইয়ে থাকা ৮৫ শতাংশ পানি শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে যথেষ্ট সাহায্য করে। সরাসরি টক দই খেতে না চাইলে ঘোল অথবা মাঠার মতো তরল পানীয় বানিয়েও খেতে পারেন। এর সঙ্গে একটু জিরার গুঁড়া, পুদিনা পাতা ও লবণ মিশিয়ে নিলে তা শরীরে যোগান দেবে অতিরিক্ত শক্তি।
শসা
শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিন পদার্থ বের করে দিতে শসার জুড়ি মেলা ভার। শসায় যে পরিমান পানি থাকে, তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাড়ুর মতো কাজ করে। গরমকালে নিয়মিত শসা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। এতে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকায় দেহের প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি পূরণে শসা খুবই উপকারী। শসা সালাদ হিসেবে অথবা জুস করে খাওয়া যেতে পারে। এতে সামান্য লবণ, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা যোগ করলে এর পুষ্টিমান বৃদ্ধি পায়।
লেবু
গরমজনিত ক্লান্তি দূর করে শরীর শীতল করতে লেবু খুবই সহজলভ্য এবং কার্যকরী। টক স্বাদের এবং প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি যুক্ত ফল হওয়ায় গরমে ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদের নিয়মিত লেবু খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি এর পাশাপাশি এতে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টিগুণও। গরমে সুস্থ থাকতে এবং স্বস্তি পেতে লেবু হতে পারে আমাদের খাদ্য তালিকার অন্যতম অংশ।
বেল
ভিটামিন সি এবং প্রচুর আঁশযুক্ত ফল হওয়ায় গরমজনিত বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে বেল অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, ক্যারোটিন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে। বেলের শরবত শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পেটের বিভিন্ন গন্ডগোল থেকে বাঁচতে আমাদের সাহায্য করে।
তরমুজ
গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে তরমুজ অন্যতম। শুধু স্বাদ আর প্রশান্তি নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও তরমুজ অনেক উপকারী। তরমুজের মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ক্যারোটিনেয়েটস বেশি থাকার ফলে তরমুজ শরীরের কোষকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ৯২ শতাংশ পানি এবং ফাইবার থাকায় গ্রীষ্মকালীন এই ফল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং সুস্থ রাখতে অনবদ্য।
কাঁচা আম
গ্রীষ্মের শুরু মানেই আমগাছে দুলতে থাকা ছোট্ট ছোট্ট টক আম। কাঁচা আম অনেকটা মুখরোচক খাবার হলেও গরম থেকে বাঁচতে এবং শরীরকে শীতল রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। কাঁচা আমে থাকে পটাশিয়াম যা গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কাজ করে। কাঁচা আম আমাদের শরীরের সোডিয়াম ক্লোরাইড ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতেও দারুণ কার্যকরী। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঁচা আম গরমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শাক-সবজি
লাউ, ঝিঙ্গা, সজনে ডাটা সহ বিভিন্ন সবুজ সবজি এবং পুঁই, কলমী ইত্যাদি শাক আমাদের অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মের এসব সবজি আমাদের শরীর এবং পেটকে ঠান্ডা রাখে। তবে এসব উপকার পেতে হলে জানতে হবে রান্নার যথাযথ পদ্ধতি। অতিরিক্ত তেল এবং মশলা দিয়ে রান্না করলে গরমে উপকারের বদলে অপকার হয় বেশি।
তাজা ফল
মধুমাসে হাতের নাগালেই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের ফল। তরমুজ, লিচু, বাঙ্গী, বেল, জাম ইত্যাদি ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তীব্র গরম থেকে রেহাই পেতে এসব ফল আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। তবে এসব ফলের থেকে আম, কাঁঠাল কিছুটা গরম জাতীয় ফল। মাত্রারিক্ত আম, কাঁঠাল খেলে গরমে পেটের অসুখ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এই ধরনের গরম জাতীয় ফল পরিমিত পরিমানে খাওয়াই উত্তম।
পরিশিষ্ট
এই লেখার শুরুতেই তরল খাবার গ্রহণের কথা উল্লেখ আছে। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন গরমে শরীরকে শীতল এবং সুস্থ রাখতে তরল খাবারের গুরুত্ব ঠিক কতটা। নিয়মিত প্রচুর পানি পান এবং সঠিক খাদ্যাভাসই পারে পানিশূণ্যতা থেকে আমাদের রক্ষা করে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে। তাই এই গরমে নিজের যত্ন নিন এবং ভালো থাকুন।
রেফারেন্স
18-11-2024
Community
খাবার শুধু পেটের খিদে মেটানোর মাধ্যম নয়; এটি আমাদের...
Read More12-11-2024
Community
যত সময় যাচ্ছে, বাংলাদেশীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ...
Read More17-10-2024
Community
বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং হলো যেকোনো ব্যবসার...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.