Economy
Written by: সুরাইয়া জামান
09-04-2024
পবিত্র রমজান মাস জুড়ে রোজা পালনের মাধ্যমে দেহের ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ ও সংযমে রাখার শিক্ষা অর্জনের পর বিশ্বের মুসলমানদের জীবনে আবারও সমাগত হয়েছে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম একটি হওয়ায় মানুষের আর্থ-সামাজিক অঙ্গনে এই উৎসবের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মার্কেট কিংবা শপিং মলে মানুষের উপচে পড়া ভীড় দেখে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদের প্রভাব সহজেই অনুমান করা যায়। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাই শুধু নয়, ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান এই চাকার সাথে যুক্ত হয় ছোট এবং মাঝারি গড়নের নানা ব্যবসা। কেবলমাত্র ঈদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই ব্যবসাগুলো নিয়েই আমাদের আজকের লেখাটি।
পরিবারকে উপহার দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বেছে নিতে পারেন দেশের সেরা ব্র্যান্ডগুলোকে। এক নজরে- ঈদের কেনাকাটায় দেশের সেরা ১০ ব্র্যান্ড
পুরুষের পোষাক
পাঞ্জাবি, ফতুয়া থেকে শুরু করে সুগন্ধি আতর, রঙ-বেরঙের টুপির সাজানো পসরা হারমেশাই চোখে পড়ে ঈদের মৌসুমে। এসবের পাশাপাশি ক্যাজুয়াল পোষাক বানানোর ব্যবসাও বেশ জমজমাট চলে এই সময়ে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড, ফ্যাশন হাউজ, অনলাইন উদ্যোক্তা ছাড়াও অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ি ঈদের সময়ে নিজেদের এই ব্যবসার সাথে জড়িত রাখেন। ঈদ মৌসুমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করেন বলে, ছোট হোক কিংবা বড়, শপিং মল কিংবা ফুটপাত, পুরুষের পোষাকের ব্যবসার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে এদেশের অর্থনীতিতে।
মহিলাদের পোষাক
ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির বড় অংশজুড়ে মহিলাদের পোষাকের রাজত্ব। বলা চলে, ঈদ মৌসুমে কেনাকাটায় পুরুষের চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকে নারীরা। এই সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ড, বুটিক হাউজ থেকে শুরু করে ফুটপাতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীদের মহা আনন্দের সাথে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। অনেক মৌসুমী বিক্রেতা ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মানের থ্রিপিস, শাড়ি সহ মহিলাদের আনুসাঙ্গিক জিনিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ এদের ক্রেতা হলেও বড় পরিসরে এই ধরনের ব্যবসার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনস্বীকার্য।
জুতার ব্যবসা
ঈদে পোষাকের পরেই জুতার চাহিদা থাকে শীর্ষে। ছোট-বড় নানা বয়েসী ক্রেতাগণ ঈদ উৎসবে যোগ দিতে বেছে নেন পছন্দ এবং মাপসই জুতা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডসহ চেনা অচেনা বিভিন্ন ক্যাটাগরির জুতার দোকানে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায় এই ঈদ মৌসুমে। পোষাকের মতোই মৌসুমী অনেক বিক্রেতা পাইকারি দরে জুতা কিনে নির্দিষ্ট পরিসরে ব্যবসা করে থাকেন। ঈদ ফ্যাশনে পূর্ণতা আনতে অনেকে আবার বেছে নেন অনলাইন শপিং। ক্রেতার কেনাকাটার মাধ্যম যাই হোক না কেনো, ঈদে ছোট-বড় যেকোন জুতার ব্যবসা হচ্ছে অন্যতম লাভজনক ব্যবসা।
নতুন টাকার নোটের ব্যবসা
ঈদে সালামী আদান-প্রদান খুবই আনন্দের একটি প্রথা। কিন্তু যদি সালামী হিসেবে নতুন কড়কড়ে নোট পাওয়া যায়, তবে যেন ঈদের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায়। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবার বেশ জমে উঠে নতুন টাকার নোটের ব্যবসা। ব্যাংকে না পেয়ে কিংবা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে এসব নোট ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কড়কড়ে নোট কিনে নেন অনেক ক্রেতা। ৫,১০,২০ এবং ১০০ টাকার নোট বেশি বিক্রি হয় এই ব্যবসায়ে। সাধারণত পুরাতন অর্থ দিয়ে নতুন অর্থ কেনার এই ব্যবসায়ে ব্যবসায়িরা বান্ডেল প্রতি ২০০-৩০০ টাকা মুনাফা করে থাকেন।
সেমাই ছাড়া ঈদের উৎসব?
কথায় আছে, সেমাই-ফিরনী ছাড়া ঈদ উল ফিতর উৎযাপন অসম্পূর্ণ। সকালে মিষ্টিমুখ করে নামাজে যাওয়া অথবা বাসায় মেহমান এলে তাদের মিষ্টিমুখ করানো, ঈদের সকালে সেমাই খাওয়ার প্রচলন বেশ পুরনো। শুধুমাত্র এই ঈদকে কেন্দ্র করে শবে বরাতের পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তোরজোড় শুরু হয় সেমাই উৎপাদনের। বিশেষ করে বগুড়া জেলায় এই ব্যবসায়িদের সংখ্যা অনেক বেশি। নিজস্ব পরিবেশে কারিগর দিয়ে সুস্বাদু সেমাই বানিয়ে তা প্যাকেটজাত করার এই ব্যবসায়ে জড়িত সবাইই কমবেশি মৌসুমী ব্যবসায়ি। রমরমা এই ব্যবসা সামলাতে অনেক কর্মীও নিয়োগ দিয়ে থাকে তারা। মৌসুমী কিন্তু লাভজনক এই ব্যবসায় ব্যবসায়িরা সাধারণত সারাবছরের মুনাফা অর্জন করে নেন।
টিকেট নিয়ে শঙ্কা অতঃপর উচ্ছ্বাস
নাড়ির টানে বাড়ী ফেরা- কথাটার সঠিক বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায় ঈদ মৌসুমে। জীবিকার তাগিদে বছরের অন্যান্য সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও ঈদের ছুটি পরিবারের সাথে কাটাতে সবাই ছোটে নিজেদের পরিবারের কাছে। ঘরে ফেরা এই মানুষগুলোর জন্য ঈদের মৌসুমের অন্যতম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হচ্ছে দূর-দূরান্তের টিকেট না পাওয়া এবং ভয়াবহ জ্যাম। অন্যদিকে যাত্রীদের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতাই ইঙ্গিত করে জমজমাট টিকেট ব্যবসাকে। বছরের অন্যান্য সময় সহনীয় মূল্য থাকলেও ঈদ মৌসুমে বাস কিংবা ট্রেনের একেকটা টিকেটের দাম চারগুণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেশের চলমান অর্থনীতিতে মৌসুমী এই টিকেট ব্যবসার বিস্তর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
রমরমা পর্যটন শিল্প
বছরের অন্যান্য সময়গুলোতে ব্যস্ততার কারনে দম ফেলবার সুযোগ না পাওয়াতে ঈদের ছুটিতে পরিবারের সাথে ঘুরতে যান অনেকেই। কক্সবাজার, সেইন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, সিলেট সহ দেশের নানা পর্যটন এলাকাগুলোতে ঈদের ছুটিতে বেশ ভীড় দেখা যায়। এই সময়ে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে রমরমা চলে দেশের পর্যটন ব্যবসাগুলো। এসব জায়গার বিভিন্ন দামী কিংবা সস্তা হোটেল, মোটেল, রিসোর্টে অনেক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। পর্যাপ্ত রুম না থাকায় প্রায় সময়ই ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই বুকিং বন্ধ হয়ে যায়। শুধু হোটেলই নয়, পর্যটন এলাকাগুলো কেন্দ্র করে বেড়ে ঊঠা বিভিন্ন ছোট-বড় ব্যবসা এই পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভর করেই টিকে আছে।
বিনোদন কেন্দ্রে আনাগোনা
ঈদের ছুটিতে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সমুদ্র কিংবা পাহাড় দেখার সময় অথবা সামর্থ্য থাকে না অনেকেরই। অনেকে আবার স্বেচ্ছায় বাচ্চা এবং পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান কাছের কোনো পার্ক কিংবা ওয়াটার ল্যান্ডে। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন সাজ এ সাজে স্থানীয় এই বিনোদন পার্কগুলো। বিনোদনের অন্যতম এই কেন্দ্রগুলোতে টিকেট এবং রাইডের মূল্য বাড়ানোর মাধ্যমে বেশ জমজমাট ব্যবসা চলে ঈদকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি ঈদকে কেন্দ্র করে সিনেমা হলে আসে নতুন নতুন সিনেমা। বিনোদনের জন্য অন্যতম এই হলগুলোতেও উপচে পড়া ভীড় থাকে পুরো ঈদের ছুটি জুড়ে।
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের চিরাচরিত এই সংজ্ঞায় অন্যতম সংযোজন হচ্ছে ঈদ উৎসব উপলক্ষ্যে নতুন কিছু কেনাকাটা। অন্যকে এবং নিজেকে উপহার দেওয়া, সালামী আদান-প্রদান, খাওয়া-দাওয়া অথবা পরিবারের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, এই সবকিছুই হচ্ছে ঈদ উৎসবের বিশেষ অংশ। তবে এই প্রত্যেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে অনেকগুলো মানুষের পরিশ্রম এবং রিজিক। ব্যবসায়ের মাধ্যমে এই মানুষগুলো শুধু অর্থনীতির চাকাই সচল রাখে না, বরং নিজেদের মেধা এবং শ্রম দিয়ে আমাদের ঈদকেও করে তোলে স্পেশাল।
16-10-2024
Economy
ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...
Read More28-08-2024
Economy
গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...
Read More23-05-2024
Economy
বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.