Community
Written by: এস এম নাহিয়ান
28-02-2024
আপনি যদি একজন বিবিএ এর ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে বিজনেস কেস কম্পিটিশন কি, তা হয়তো বিস্তারিত বলাটা বাহুল্য। কিন্তু বর্তমানে ব্যাচেলরস অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর ছাত্র ছাড়াও আরও অসংখ্য বিভাগের ছাত্ররা বিজনেস কেস কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করছে। মূলত কেস কম্পিটিশন হলো এমন একটি প্রতিযোগিতা যেখানে সাধারণত শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। বিজনেস কেস কম্পিটিশনের ক্ষেত্রে তা হতে পারে সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া দাড় করানো। অথবা বড় কোনো কোম্পানির ইতোমধ্যে বিদ্যমান কোনো সমস্যার সমাধান করা। করপোরেট দুনিয়াতে চাকরির সুবিধা পেতে বর্তমানে বিবিএ থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টসের ছাত্ররাও বিজনেস কেস কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন অনেক গুলো কম্পিটিশন হলেও বাংলাদেশে সবগুলো অনুষ্ঠান সরাসরি অনুষ্ঠিত হয় না। তাই বাংলাদেশী ছাত্রদের কাছে সহজলভ্য এমন কিছু বিজনেস কেস কম্পিটিশন দিয়েই আজকের এই লেখাটি সাজানো হয়েছে।
হাল্ট প্রাইজ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সোশাল অন্ট্রপ্রনারশিপ কেস কম্পিটিশন। সোশাল অন্ট্রপ্রনারশিপ মানে হলো সামাজিক ব্যবসা। অর্থাৎ হাল্ট প্রাইজ বিশ্বজোড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিরসনে ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিতে সাহায্য করে। হাল্ট প্রাইজ সরাসরি জাতিসংঘের সাথে সংযুক্ত। ফলে হাল্ট প্রাইজে জয়ী হতে হলে অবশ্যই আপনার বিজনেস আইডিয়াটাকে জাতিসংঘের কোনো না কোনো এসডিজি গোলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। এই প্রতিযোগিতাটিতে রয়েছে মোট চারটি ধাপ। বাংলাদেশের অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এর অন-ক্যাম্পাস রাউন্ড। সেই রাউন্ড শেষ করে সরাসরি রিজিওনালে যাওয়ার সুযোগ থাকে। রিজিওনাল বা আঞ্চলিক রাউন্ড হয় বস্টন, প্যারিস, লিসবন সহ মোট ৮টি শহরে। এর পরে গ্লোবাল এক্সিলেটর রাউন্ড পার করে মাত্র ৬টী টিম ফাইনালে প্রতিযোগিতা করতে পারে। যার মধ্যে বিজয়ী পায় ১ মিলিয়ন ডলার প্রাইজ মানি।
ব্যাটল অফ মাইন্ডস হলো আরেকটি বিজনেস কেস কম্পিটিশন যা প্রতি বছর আয়োজন করে থাকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি, তথা ব্যাট (BAT)। বাংলাদেশের প্রথম সারির করপোরেট গুলোর মধ্যে একটি এই ব্যাট। আর এই ব্যাটল অফ মাইন্ডস এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপনি জিতে নিতে পারেন ব্যাট এ চাকরি করার সুযোগ। আর আপনার যদি ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকে। তাহলে রয়েছে ৫০,০০০ ইউরো জিতে নেওয়ার সুযোগ। বিশ্বের মোট ৩০টি দেশে এই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীরা সরাসরি বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করে। সেখান থেকে বিজয়ী দলই পায় প্রাইজ মানি। এই কেস কম্পিটিশিনটাও শুধু ব্যাচেলরস বা মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য সীমাবদ্ধ।
বিজমায়েস্ত্রোস হলো ইউনিলিভারের ফ্ল্যাগশিপ বিজনেস কম্পিটিশন প্রোগ্রাম। এই কম্পিটিশনটি বাংলাদেশের অন্যতম সম্মানজনক বিজনেস কেস কম্পিটিশন হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। শুধু মাত্র শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই কম্পিটিশনে একবারই অংশগ্রহণ করতে পারে। এই কম্পিটিশনের তিনটি রাউন্ড হয়েছে। প্রথম রাউন্ডটি অনলাইনে হলেও পরের দুটো অফলাইনে। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলে আসা এই কম্পিটিশনে গতবছর ২০০টিরও বেশি দল অংশ নেয়। তার ভেতর ৩০টি টিম দ্বিতীয় রাউন্ডে যায়। প্রথম তিনটি টিম ইউনিলিভার লিডারশিপ ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে ইন্টার্ন করার সুযোগ পায়। চ্যাম্পিয়ন টিম বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে লড়ার সু্যোগ পায়। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো টিম মেম্বারদের একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ার দরকার নেই। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই কম্পিটিশন হয়ে থাকে।
পিটাক হলো সাপ্লাই চেইন বিষয় সবচেয়ে বড় কেস কম্পিটিশন। এটিকে সরাসরি বিজনেস কেস কম্পিটিশন বলা না হলেও অধিকাংশ বিজনেস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্ররাই এতে অংশগ্রহণ করে থাকে। এটির আয়োজনে থাকে ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন এজুকেশন অ্যালায়েন্স (International Supply Chain Education Alliance)। তবে অন্যান্য কেস কম্পিটিশন এর মতো এটিতে কোনো প্রাইজ মানি দেওয়া হয় না। এতে আইএসসিইএ (ISCEA) এর ‘সার্টিফাইড সাপ্লাই চেইন এনালিস্ট’ (Certified Supply Chain Analyst) কোর্সের স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিটি টিমে ৪ জন সদস্য থাকতে হয়। প্রথম ৬টি টিম ১০০% স্কলারশিপ জেতার সুযোগ পায়। পরের ৫০টি টিম ৭০% স্কলারশিপ জেতার সুযোগ পায়। আর তার পরের ৪৪টি টিম ৬০% স্কলারশিপ জেতার সুযোগ পায়। তবে এই কোর্সটি একবার করতে পারলে দুই বছর মেয়াদ অবধি নামের সাথে CSCA যুক্ত করার সুযোগ মেলে। যা কিনা করপোরেট, বিশেষত সাপ্লাই চেইনের দুনিয়ায় বেশ সুবিধা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশে সরাসরি আয়োজিত হয় এমন আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিজনেস কেস কম্পিটিশন হলো এইচএসবিসি বিজনেস কেস কম্পিটিশন। এইচএসবিসি ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত এই কম্পিটিশনটি গতবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাথে যৌথ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কম্পিটিশিনটিও শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে হবে। দলের সদস্য সংখ্যা হবে ৪। প্রথম রাউন্ডের জন্য ৫০-৬০ দল নির্বাচন করা হবে। ১০টি গ্রুপে ভাগ করে দেওয়ার পর তাদের ৩ ঘন্টা সময় দেওয়া হবে। তার ভেতরেই তাদের একটি কেস সমাধান করতে হবে। পরবর্তী রাউন্ডেও ৩০টি টিম একই ভাবে সমাধান করে শেষ রাউন্ডে যায়। ১ম, ২য় ও ৩য় টিম যথাক্রমে ২ লক্ষ, ১ লক্ষ ও ৫০০০০ হাজার টাকার প্রাইজ মানি পেয়ে থাকে।
ম্যারিকো বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত আরেকটি বিজনেস কেস কম্পিটিশন হলো ওভার দ্যা ওয়াল। ম্যারিকো একে প্রডাক্ট ইনোভেশন কম্পিটিশন নামেই ডাকে। বিজমায়েস্ত্রোস এর মতো এটিতেও রয়েছে ইন্টার্নশিপের সুযোগ। এই প্রতিযোগিতার প্রথম সারির বিজয়ীরা দুই মাস ব্যাপী আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপের সুযোগ পায়। এছাড়াও মোট প্রাইজ মানির পরিমাণ ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এই প্রতিযোগিতাটিতে শুধু মাত্র থার্ড ও ফাইনাল ইয়ারের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে।
মার্কেটেনিয়াক হলো আর্মি আইবিএ কর্তৃক আয়োজিত একটি মার্কেটিং বিজনেস কেস কম্পিটিশন। এ প্রতিযোগিটিতে একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির জন্য সম্পূর্ণ একটি ক্যাম্পেইন ডিজাইন করতে দেওয়া হয়। যেমন গতবার তাদের টাইটেল স্পন্সর প্রাণ এর একটি কেস দেওয়া হয়েছিলো। এর প্রথম রাউন্ডটি অনলাইন যেখানে একটি স্লাইড জমা দিতে হয়। পরবর্তী দুইটি রাউন্ড অফলাইন। যেখানে সরাসরি প্রেজেন্ট করতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত যেই প্রতিযোগিতা গুলো খুব দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠছে, মার্কেটেনিয়াক তার ভেতর অন্যতম।
স্টার্ট আপ ব্লু বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সুনীল অর্থনীতি ভিত্তিক বিজনেস ইনকিউবেটর। এই বিজনেস ইনকিউবেটরটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক পরিচালিত। এর প্রথম বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশন হয় নৌসদরের সাগরিকা হলে। যেখানে একই সাথে নৌবাহিনী প্রধান ও নৌবাহিনির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। বিজনেস কেস প্রতিযোগিতায় এভাবে একই সাথে সরকারি বেসরকারি সমন্বয় দুর্লভই বলা চলে। এই বিজনেস কম্পিটিশনে জয়ীরা যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৪০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা করে পুরুষ্কার পেয়েছেন। এই প্রতিযোগিতার অন্যতম আরেকটি দিক হলো বিজয়ীদের জন্য সরাসরি একটি অফিস রুম বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করা হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতি সংক্রান্ত ব্যবসায় একদম নতুন কেউ নামতে চাইলে এটিই বর্তমানের একমাত্র মাধ্যম।
বিভিন্ন ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত যে সকল বিজনেস কম্পিটিশন বাংলাদেশে সুপরিচিত তার ভেতর অন্যতম ‘প্লেমেকারস’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং ক্লাব আয়োজিত এই বিজনেস কেস কম্পিটিশিনটি। গত বছর এর পঞ্চম সিজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সিজনে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এতে অংশগ্রহণ করে। এর প্রাইজ মানি ৬০০০০ টাকা। সাধারণত মে থেকে অগাস্ট মাসে এই কম্পিটিশনটি হয়ে থাকে।
ডেভথন প্রতিযোগিতাটি ঠিক বিজনেস কেস কম্পিটিশন না হলেও এটি একটি ‘ডেভেলপমেন্ট কম্পিটিশন’। কিন্তু বিজনেসের শিক্ষার্থীদের বিজনেসের পাশাপাশি ডেভেলপমেন্ট নিয়েও ধারনা রাখা উচিত। কারণ যতই দিন যাচ্ছে, বৈশ্বিক ব্যবসা গুলো ততই ডেভেলপমেন্ট খাতের দিকে ঝুকছে। ডেভথন নামক এই প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে থাকে বিউইউপি ডেভেলপমেন্ট লিডার’স ক্লাব। তিন সপ্তাহ জুড়ে চলা প্রতিযোগিতাটিতে চারটি অংশ থাকে। ডেভেলপমেন্ট কেস কম্পিটিশন, ডেভেলপমেন্ট ট্রিভিয়া, ডেভেলপমেন্ট এক্সপো এবং ডেভটক। অক্টোবর মাসে কেস কম্পিটিশনটি হয়ে থাকে। এর সার্বিক প্রাইজ পুলের পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা।
দিন শেষে বিজনেস কেস কম্পিটিশন প্রত্যেকটি বিজনেস স্টুডেন্টদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। কিন্তু তার পাশাপাশি অন্যান্য ঘরানার শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি একটি চমৎকার সুযোগ। কারণ এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যেমন নিত্য-নতুন স্কিল তৈরি হয়, ঠিক তেমনই জানার পরিধিও অনেক বৃদ্ধি পায়।
১। হাল্ট প্রাইজ
18-11-2024
Community
খাবার শুধু পেটের খিদে মেটানোর মাধ্যম নয়; এটি আমাদের...
Read More12-11-2024
Community
যত সময় যাচ্ছে, বাংলাদেশীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ...
Read More17-10-2024
Community
বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং হলো যেকোনো ব্যবসার...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.