Print World

Economy

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য - টাকা কেনাবেচা করে বিত্তশালী হওয়ার উপায়

Written by: এস এম নাহিয়ান

08-02-2024

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য - টাকা কেনাবেচা করে বিত্তশালী হওয়ার উপায়

 

টাকা দিয়ে টাকা কেনা, অথবা মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা কেনা। বিষয়টি অনেকের কাছে বেশ অবাক করা মনে হলেও সারা বিশ্বে প্রতিটি দেশেই এই ব্যবসা চলছে প্রতিনিয়ত। অন্য যেকোনো শিল্পের চেয়ে এই শিল্পে  অর্থ লেনদেনের পরিমাণ বহু বহু গুণে বেশি। কারণ এই শিল্পে অর্থ বা মুদ্রাই হলো পণ্য। আর ইন্টারনেটের সাহায্যে বর্তমানে সারা বিশ্বেই এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে যেমন এই ব্যবসায় নেমে অল্প সময়েই অনেক বেশি লাভের মুখ দেখেছে, ঠিক তেমনই অনেকেই সম্মুখীন হয়েছে ক্ষতির। প্রত্যেক ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি থাকবেই। কিন্তু এ ব্যবসার বিশেষ দিকে হলো আপনার ক্রয়কৃত পণ্যটি সম্পূর্ণ মূল্যহীন হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ফরেক্স ট্রেডিং বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য সম্পর্কে। 


আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য কি?

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য বলতে বুঝায় আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার কেনা বেচা। একে পোষাকী ভাষায় ফরেইন এক্সচেঞ্জও বলা হয়ে থাকে। আর এই ফরেক্স এর পূর্ণরুপ হলো ফরেইন কারেন্সি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ। অর্থাৎ ফরেইন কারেন্সি তথা বৈদিশিক মুদ্রা এক্সচেঞ্জ তথা রুপান্তরের মাধ্যমেই এ ব্যবসা হয়ে থাকে।

এক দেশের মুদ্রার বিনিময়ে আরেক দেশের মুদ্রা ক্রয় করা নতুন কিছু নয়। ধরা যাক বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে ভ্রমণ করবে। তখন সে বাংলা টাকা অথবা ডলারের বিনিময়ে অবশ্যই ভারতীয় রুপী সংগ্রহ করবে। আর এই মুদ্রা কেনা-বেচার ব্যবসাই হলো ফরেক্স ট্রেডিং। যেখানে মুদ্রাটাই বিনিয়োগ আবার মুদ্রাটাই সরাসরি পণ্য। মূলত এই সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিই আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য নামে অভিহিত করা হয়। 

যেভাবে কাজ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য অত্যন্ত জটিল হলেও এর মূলনীতিটি তেমন জটিল নয়। আর লেখার এই অংশে এর মূলনীতি সম্পর্কেই সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে কিছু বাস্তব উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে। 

 

ধরা যাক, আপনার কাছে ১ লক্ষ টাকা রয়েছে যা পুঁজি করে আপনি ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করতে চান। এর বিনিময়ে আপনি যদি ডলার ক্রয় করতে চান তাহলে আজকের বাজার দর অনুযায়ী প্রতি ডলার ক্রয় করতে আপনার খরচ হবে ১০৯ টাকা ৮২ পয়সা। অর্থাৎ ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আপনি পাবেন ৯১০.৬ ডলার। 

 

বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই টাকার বিপরীতে ডলারের মান বেশ অস্থির। ধরা যাক আগামী সপ্তাহে কোনো কারণে টাকার মান আরও কমে গেলো বা ডলারের মান বেড়ে গেলো। দুই ক্ষেত্রেই ১ ডলার ক্রয় করতে তখন আপনার আরও বেশি খরচ করতে হবে। যদি আগামী সপ্তাহে ডলারের দাম হয় ডলার প্রতি ১১৫ টাকা তাহলে এই সপ্তাহে কেনা ৯১০.৬ ডলার হয়ে যাবে ১০৪,৭১৯ টাকা। 

 

 

অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে আপনার লাভ হলো ৪,৭১৯ টাকা। যা মোটামুটি ৪.৭% লাভের সমান। মূলত এই মূলনীতি মেনেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য চলে থাকে। বিষয়টিকে অনেকটা শেয়ার বাজারের সাথে তুলনা করা যায়। সময়ের সাথে সাথে শেয়ারের দাম যেমন বাড়ে ও কমে, ঠিক তেমনই মুদ্রার দামও বাড়ে ও কমে। আপাতদৃষ্টিতে লাভের পরিমাণ কম মনে হলেও বিনিয়োগ যত বড় হয়, লাভের পরিমাণও নির্দিষ্ট হারে তত বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রচুর লাভ করা সম্ভব। আবার ঠিক তেমনই অল্প সময়ের ব্যবস্থানে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীনও হওয়া সম্ভব। 

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যের হাতেখড়ি 

ফরেক্স ট্রেডিং বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যের বাজার খুবই অস্থির হওয়ায় এ ব্যবসায় নামতে হলে বেশ কিছু শর্ত মেনেই নামতে হয়। প্রথমত, ফরেক্স ট্রেডিং এর পূর্ণ জ্ঞান না নিয়ে এ ব্যবসায় নামলে সমূহ বিপদ। ফরেক্স ট্রেডিং কিভাবে কাজ করে, কিসের উপর ভিত্তি করে মুদ্রার দাম কমতে বা বাড়তে পারে এ সব কিছু নিয়েই পরিষ্কার ধারনা থাকা প্রয়োজন সবার আগে। এছাড়াও ঠিক করে নেওয়া উচিত বিনিয়োগের পরিমাণ। অনেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঠিক না করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যে নেমে পড়েন। ফলে কোনো একবার ক্ষতির সম্মুখীন হলে তার পুরো পুঁজির মূল্যই অনেক কমে যায়। এসব প্রাথমিক বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান থাকলে অতঃপর পালা ফরেক্স একাউন্ট খোলার। 

ফরেক্স একাউন্ট (Forex Account) 

ফরেক্স ট্রেডিং এ অংশ নিতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন একটি ফরেক্স একাউন্ট। তবে একজন মুদ্রা ব্যবসায়ী একবারে কি পরিমাণ মুদ্রার কেনা-বেচা করতে পারবে তার কিছু সীমা রয়েছে। সেই সীমার উপর নির্ভর করে ফরেক্স একাউন্টকে তিন ভাগ করা হয়।

 

মাইক্রো ফরেক্স একাউন্টঃ এই ধরনের ফরেক্স একাউন্ট এ একবারে মাত্র ১০০০ ডলার সমমূল্যের মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। 

 

ম্যাক্রো ফরেক্স একাউন্ট; এই ধরনের ফরেক্স একাউন্টে মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের মাত্রা মাইক্রো এর তুলনায় ১০ গুণ। অর্থাৎ একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার আদান-প্রদান করতে পারবেন। 

 

স্ট্যান্ডার্ড ফরেক্স একাউন্টঃ এই ধরনের একাউন্টকেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এর উর্ধ্বসীমা ১ লক্ষ ডলার। 

 
আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যের কৌশল 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যের সফলতা সম্পূর্ণ রুপে নির্ভর করে একজন ট্রেডারের কৌশলের উপরে। যেহেতু এই বাজারে কোনো কিছু উৎপাদন হয় না, শুধু মুদ্রাই কেনা বেচা হয়, তাই মুদ্রার সঠিক সময়ের কেনা-বেচাই এর সফলতার চাবিকাঠি। এক্ষেত্রে অনেক ধরনের কৌশলেরই নির্দিষ্ট নাম রয়েছে। যেমনঃ 

 

লেভারেজ 

ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো সম্পূর্ণ ঝুঁকি নিজের কাঁধে না নেওয়া। একজন সফল উদ্যোক্তা কখনই ব্যবসার শতভাগ বিনিয়োগ নিজে করবেন না। ঠিক তেমনই আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বহিরাগত বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে একে বিনিয়োগ না বলে ধার বলাই ভাল। ধরা যাক একজন ট্রেডার ১০,০০০ ডলার ক্রয় করতে চায়। এক্ষেত্রে সে চাইলে একজন ব্রোকারের কাছ থেকে ৫,০০০ ডলার নিয়ে এবং বাকিটা নিজে দিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। মূলত এই ধার করার প্রক্রিয়াটিই হলো লেভারেজ। 

লং ও শর্ট 

আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার দাম বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে। তা হতে পারে যুদ্ধ, নতুন আন্তঃদেশীয় ব্যবসায়িক চুক্তি, ভূ-রাজনীতি, প্রযুক্তি, নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা ইত্যাদি নানা কিছু। আর এসব কারণ গুলো যারা বুঝতে পারেন তারাই একটি মুদ্রা আগে থেকে অনেক বেশি করে কিনে রাখেন। অথবা কিনে রাখা মুদ্রা অতি দ্রুত বিক্রি করে দেন। এই জমিয়ে রাখার প্রক্রিয়াকে বলে গোয়িং লং আর বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে গোয়িং শর্ট। মূলত যারা যুক্তিনির্ভর অনুমান করতে পারেন তারাই এসব কৌশল সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারেন। তবে এর বাইরেও ব্যবসায়িক স্থায়ীত্বের ভিত্তিতে বেশ কিছু শ্রেণিবিভাগ আছে। সেগুলো হলোঃ 

ডে ট্রেড 

মাত্র এক দিনের জন্য এ ধরনের ফরেক্স ট্রেডিং করা হয়ে থাকে। দিনের যে অংশে একটি মুদ্রার দাম বাড়তে থাকে তখনই সেই মুদ্রা কিনে রাখা হয়। অতঃপর সেই মুদ্রার দাম পড়ার আগেই আবার তা বিক্রয় করে দেওয়া হয়। এ ধরনের ট্রেড এ লাভ ও ঝুঁকি দুটিই খুব কম। 

পজিশন ট্রেড 

এই ট্রেডের সময়কাল বছরেরও বেশি হতে পারে। সাধারণ কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ছাড়া এত লম্বা সময়ের জন্য কেউ বিনিয়োগ করার সামর্থ্য রাখে না। 

এর বাইরেও স্ক্যাল্প ট্রেড, সুইং ট্রেড ইত্যাদি নানা ধরনের ট্রেড রয়েছে। 

শেষকথা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাণিজ্য বেশ ভাল একটি ব্যবসা। এমনকি ক্ষতির সম্মুখীন হলেও একটি মুদ্রার দাম শূন্য হয়ে যায় না। ফলে মুদ্রা বাণিজ্যে আগ্রহ অনেকেই। কিন্তু এ বাণিজ্যে সফলতার জন্য চাই বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার ও তার প্রয়োগ। তাই আগ্রহ ভরে শুরু করলেও সফল হতে চাই দারুণ পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়।

তথ্যসূত্র 

১। ইনভেস্টোপেডিয়া 

২। ফোর্বস 

৩। করপোরেট ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউট 

 ৪। ফরেক্স.কম 

Previous Post

Next Post

Related Posts

যেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী করে...

16-10-2024

Economy

যেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী করে...

ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...

Read More
বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট নিরসন হবে কিভাবে?

28-08-2024

Economy

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট নিরসন হবে কিভাবে?

গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...

Read More
মুদ্রাস্ফীতির একাল সেকাল

23-05-2024

Economy

মুদ্রাস্ফীতির একাল সেকাল

বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter