Economy
Written by: Suraiya Zaman
08-11-2023
শুক্রবার দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে পরিবারের সবাই মিলে সাদাকালো টেলিভিশনে সিনেমা দেখার স্মৃতি মনে পড়লে আমরা সবাই-ই কম বেশি কাতর হয়ে পড়ি। ছুটির দিনে বাঁশের মাথায় টানানো এন্টেনা ঘুরিয়ে সিনেমা দেখার সেই অলস দুপুরগুলো এখনো রঙিন হয়ে আছে আমাদের জীবনে। এরপর আমাদের ড্রয়িংরুমে আস্তে আস্তে সেই সাদাকালো টিভির জায়গা দখল করে নিলো রঙিন টিভি। এন্টেনা ঘুরিয়ে সেই টিভি দেখতে হয়না। এর সাথে থাকা রিমোট দিয়ে নিজের আরামের জায়গা থেকে টিভি অন-অফ করা যায়, প্রয়োজনে চ্যানেল পাল্টে নিজের পছন্দমতো প্রোগ্রাম দেখা যায়। সে এক অবাক বিস্ময়!
আপনি কি জানেন, সাদাকালোর পরিবর্তে রিমোট চালিত এই রঙিন টিভির যুগের সূচনা হয়েছিলো স্যামসাং এর হাত ধরে! হ্যাঁ, স্যামসাং ব্রান্ডের কথা বলছি যে ব্রান্ডের ফোন দিয়েই আপনি হয়তো এই লেখাটি পড়ছেন। শুধু রঙিন টেলিভিশন আর স্মার্টফোন নয়, ফ্রিজ থেকে শুরু করে ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার আরোও নানান কিছু বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। আজকে আমরা জানবো, কিভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিলো ১৯৩৮ সালে, জানবো এর গ্রোথ স্ট্রাটেজি সহ আরোও নানান দিক সম্পর্কে।
ছবিঃ ১৯৩৮ সালে যেখান থেকে শুরু হয় স্যামসাং এর পথচলা
স্যামসাং এর জন্ম এবং পথচলা
১৯৩৮ সালের ১ মার্চ নতুন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন লি বিয়ং চল নামের কোরিয়ান এক নাগরিক। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘স্যামসাং ট্রেডিং কোম্পানি’। স্যামসাং শব্দের অর্থ ‘তিন তারকা’। কোরিয়ানরা তিন সংখ্যাকে শুভ মনে করে। তাই হয়তো নিজের সৌভাগ্য বয়ে আনার জন্য শুভ এই নাম বেছে নিয়েছিলেন লি। যাই হোক, দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরে ৪০ জন কর্মচারী আর কয়েকটি ট্রাক নিয়ে একটি গ্যারেজে যাত্রা শুরু করা স্যামসাং ট্রেডিং কোম্পানিটি ছিলো মূলত একটি নুডুলস তৈরির কোম্পানি। তারা নুডুলস তৈরির পাশাপাশি পুরো শহরজুড়ে বিভিন্ন গ্রোসারী পণ্য সরবরাহের কাজ করতো। আপনি কি জানেন, একইভাবে আমেরিকার ছোট্ট একটি গ্যারেজে এভাবেই শুরু হয়েছিলো টেক জায়ান্ট অ্যাপলের যাত্রা? বিস্তারিত পড়ুন এখানে- অ্যাপলের বিবর্তনঃ গ্যারেজ থেকে টেক জায়ান্ট
১৯৩৮ সাল পরবর্তী তিন দশক ফুড প্রসেসিং, টেক্সটাইল, সিকিউরিটিজ এবং রিটেইল ব্যবসাও করে কোম্পানিটি। নানান উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে কোরিয়ার যুদ্ধের পর লি ডিয়েগো তে স্যামসাং এর অন্তর্ভুক্ত একটি উল তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। এভাবে ধীরে ধীরে লি বিয়ং চল স্যামসাং গ্রুপকে প্রসারিত করতে থাকেন। ষাটের দশকের পর কোম্পানিটি ইলেক্ট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখে।
১৯৭০ সালে লি এর মৃত্যুর পর কোম্পানিটির বেশ কয়েকটি শাখা হয়, যার অন্যতম স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস। ১৯৯০ এর দশকে স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস শাখার দিকে মনযোগ দেয়া শুরু করে। ষাটের দশকে সাদা-কালো টিভি নির্মাণ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও স্মার্টফোন তৈরি করে বাজারে প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছে স্যামসাং। স্যামসাংয়ের মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক ডিভিশন থেকে আসে। ২০১৯ সালে আয়ের দিক থেকে এটি ছিলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানি।
ছবিঃ যাত্রা শুরু হল স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের
১৯৬৯ সাল থেকেই মূলত স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের পথচলা শুরু হয় ব্যাপক পরিসরে। বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে ৮০ টিরও বেশি ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপারেল, অটোমোবাইল কেমিক্যাল, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, কম্পোনেন্ট মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সার্ভিস, ডিআরএম, শিপমেন্ট, টেলি কমিউনিকেশন, ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড হোম অ্যাপলায়েন্স প্রভৃতি। সেবার মধ্যে রয়েছে অ্যাডভারটাইজিং ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস হসপিটালিটি ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি, সার্ভিসেস মেডিকেল হেলথ কেয়ার এবং শিপ বিল্ডিং। এর আরোও আছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, স্যামসাং কর্নিং, স্যামসাং ইলেকট্রো-মেকানিক্স, স্যামসাং সেমিকন্ডাক্টর এবং স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশনের মতো নানা শাখা।
হেভি ইন্ডাস্ট্রির আওতায় সবচেয়ে বড় জাহাজ তৈরি করে স্যামসাং। স্যামসাংয়ের জাহাজ নির্মাণের অঞ্চলটি ৫ হাজার ২০৪ টি ফুটবল মাঠের সমান। এ ছাড়াও স্যামসাংয়ের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৌশল বিভাগ। স্যামসাং টেক শাখা প্রথমবারের মতো তৈরি করেছে ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার, ক্রেন এবং ট্যাংক।
মজার বিষয় হচ্ছে, এভারল্যান্ড নামক স্যামসাংয়ের রয়েছে সুন্দর একটি থিম পার্ক। এই পার্কটিতে অ্যাডভেঞ্চার ম্যাজিক থেকে সবকিছু রয়েছে। প্রতিবছর ৭৩ লাখ দর্শনার্থী থিম পার্কটিতে ভ্রমণে আসেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সবথেকে বড় এই কোম্পানিটি দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জিডিপির ১৭ শতাংশ। অনেক দিক থেকেই প্রথম অবস্থান দখল করে থাকা স্যামসাং বিশ্বের সবথেকে বেশি মেমোরি চিপ তৈরি করা কোম্পানি। তাদের তৈরি করা চিপ অ্যাপল তাদের আইফোন ৪, আইফোন ৪ এস, আইফোন ৫, আইফোন ৫ এস ডিভাইসে ইউজ করে আসছে। মজার কথা হচ্ছে, স্যামসাং অ্যাপলের সবথেকে বড় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান!
প্রথম স্মার্টওয়াচ প্রযুক্তির আবিষ্কারক এই স্যামসাং এ বর্তমানে মোট ৫ লাখ কর্মী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।
পৃথিবীর উচ্চতর বিল্ডিং সৌদি আরবের বুর্জ খালিফা নির্মাণে স্যামসংয়েরও বিপুল পরিমাণের ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে। এছাড়াও এর একটি শাখা গ্লোবাল ইঞ্জেনিয়ারিং এবং কন্সট্রাকশন সেক্টরে নিজেদের নিয়মিত সেবাসমূহ দিয়ে থাকে।
গ্রোথ স্ট্রাটেজি
১৯৯৫ সালে স্যামসাংয়ের ফ্যাক্টরিতে পণ্য সামগ্রী দেখতে যাবার পর পণ্যের নিম্ন মানের কারণে প্রায় ২০০০ কর্মীর সামনে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য (মোবাইল, টিভি এবং ফ্যাক্স মেশিন) আগুনে পুরিয়ে ফেলেছিলেন সিইও কুন হি লি। এর আগে এই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ থাকলেও এরপর থেকে স্যামসাংয়ের প্রথম এবং প্রধান বিষয় হচ্ছে কোয়ালিটি। ২০০০ সালের দিকে নোকিয়া এবং সনিকে টেক্কা দিয়ে বাজার বাজিমাত করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিলো এই গ্রোথ স্ট্রাটেজির।
‘প্রচারেই প্রসার’ এই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলা স্যামসাং প্রচারে কখনোই কার্পন্য করেনি। পণ্যের ব্যাপক প্রচারনা তাদের গ্রোথ স্ট্রাটেজির একটা বড় অংশ। বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার তারা শুধু এই প্রচারনার খাতেই খরচ করে থাকে।
গুনগত মানের সাথে আপডেটেড ডিজাইন এবং ফিচারসমৃদ্ধ পণ্যের মূল্য সবশ্রেনীর মানুষের হাতের নাগালে রাখা তাদের আরেকটি বড় গ্রোথ স্ট্রাটেজি।
ইলেকট্রনিক্স এর ক্ষেত্রে স্যামসাং এর অবদান সবচেয়ে বেশি। এন্ড্রয়েড নির্ভর ফোনের পথিকৃথ এই স্যামসাং শুরু হয়েছিল একটি ছোট নুডুলস তৈরির কারখানা থেকে যা আজকে বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
16-10-2024
Economy
ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...
Read More28-08-2024
Economy
গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...
Read More23-05-2024
Economy
বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.