Home » MAWblog » Top 10 in Bangladesh » সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াবার জন্য ঢাকার ভিতরেই ১০ টি সেরা স্থান
Top 10 in Bangladesh
Written by: এস. এম. নাহিয়ান
08-10-2023
পরিবারের সাথে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কার না একটু ঘুরতে বেরোতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সারা সপ্তাহ পরিশ্রম করে সপ্তাহ শেষে ক্লান্তিটা যেন আরও জেকে বসে। আবার কখনো ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে পারলেও, কাছে পিঠে ভাল ঘোরার যায়গা পাওয়াটাই হয়ে যায় মুশকিল। কোথাও ঘুরতে গেলে থাকে নানা চিন্তা। সময়, যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিবেশ, খাওয়ার যায়গা ও সর্বোপরি খরচ, সব কিছু ব্যাটে বলে না মিললে আসলে ঘোরাটা ঠিক হয়ে ওঠে না। এ সকল কিছু বিবেচনায় রেখেই তাই আজকে তুলে ধরা হচ্ছে ঢাকার ভিতরেই ঘোরার জন্য সেরা ১০টি স্থান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বা হয়তো সপ্তাহের একদিন আধা বেলা সময় পেলেও চট জলদি ঘুরে আসতে পারবেন এসব স্থান থেকে।
ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান সমূহকে নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করলে অবশ্যই লালবাগ কেল্লা সবার উপরে থাকবে। চলুন খুব সংক্ষেপে জানা যাক লালবাগ কেল্লা সম্পর্কে।
লালবাগ কেল্লার আদি বা আসল নাম ফোর্ট আওরাঙ্গবাদ (Fort Aurangabad) বা আওরাঙ্গাবাদ কেল্লা। আওরাঙ্গাবাদ শহরটি অবশ্য অবস্থিত ভারতের মহারাষ্ট্রে। কিন্তু ঢাকায় অবস্থিত আওরাঙ্গাবাদ কেল্লাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৬৭৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন তৎকালীন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে মুহাম্মাদ আজম। পরবর্তীতে মুহাম্মাদ আজমের স্থলাভিষিক্ত হন সুবেদার শায়েস্তা খাঁ। কিন্তু শায়েস্তা খাঁ এর কন্যা পরি বিবি কেল্লাটিতে মারা যাওয়ায় তিনি এটিকে অভিশপ্ত মনে করতে শুরু করেন। ফলে তিনি এই কেল্লাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন নি। পরবর্তীতে বাংলার রাজধানী ঢাকা হতে মুর্শিদাবাদে সরিয়ে নিলে কেল্লাটি পুরোপুরি পরিত্যাক্ত হয়। ১৮৪৪ সালের দিকে এলাকার নাম অনুসারে এটির নাম হয় লালবাগ কেল্লা।
ছবিঃপিনু রহমান
লালবেগা কেল্লার প্রধান আকর্ষণ হলো পাঁচটি বস্তু।
-পরি বিবির মাজার।
- দরবার-ই-আম
-মসজিদ
-গোপন সুড়ঙ্গ
-পরিত্যাক্ত পুকুর।
এর ভেতর দরবার-ই-আম কে পরিণত করা হয়েছে লালবাগ জাদুঘরে। এর পাশেই রয়েছে মোঘল আমলের কামান। তবে মসজিদটিতে সাধারণ দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। গোপন সুড়ঙ্গটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হওয়ায় সেটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে সমগ্র লালবাগ কেল্লার পরিবেশই অত্যন্ত মনোরম। রয়েছে ছায়াদায়ক স্থানে বসার সুবিধা ও খাওয়ার পানির সুব্যবস্থা। এছাড়া কেল্লার দালানের উপরে বসে চাইলে পুরো স্থানটির দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবেন দীর্ঘ সময়।
লালবাগ কেল্লায় যেতে ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাসে করে আজিমপুরে আসতে হবে। সেখান থেকে ৩০-৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সহজেই পৌছে যাবেন কেল্লার গেটে। ২০ টাকার টিকেট কেটে থাকতে পারবেন প্রায় সারা দিন। এছাড়া আশে পাশে আধুনিক রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ঘরোয়া ভাতের হোটেল রয়েছে অগণিত।
লালবাগ কেল্লার পরে স্বভাবতই যেই স্থানটির নাম আসে সেটি আহসান মঞ্জিল।
ঢাকার নবাবদের বাসভবন হিসেবে সুপরিচিত এই আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ থেকে ১৮৭২ অবধি নির্মাণ হওয়া এই ভবনটির অবস্থান বুড়িগঙ্গা নদীর ঠিক পাশেই, পুরানো ঢাকার কুমারটুলিতে। তবে স্থানটির ইতিহাস আরও পুরোনো। মুঘল আমলে শেখ এনায়েত উল্লাহ নামে একজন ব্যক্তির বাগান বাড়ি ছিল এই স্থানটি। তৎকালীন সময়ে এর নাম ছিল রঙমহল। যদিও রঙমহলের এক নর্তকীর জের ধরে খুন হন শেখ এনায়েত উল্লাহ। পরবর্তীতে সে স্থানেই গড়ে ওঠে বিখ্যাত আহসান মঞ্জিল।
ছবিঃ লেখক
আহসান মঞ্জিল স্থাপনাটাই একটি বিশেষ দর্শনীয় বস্তু। ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যকলায় তৈরি এই ভবনটি ঢাকার অন্যতম সুন্দর ভবন। এছাড়াও এর ভেতরে রয়েছে ঐতিহাসিক চেয়ার, টেবিল, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তির বিশাল ছবি। এছাড়াও নবাবদের বিশাল খাবার হল, অবিকৃত ডিশ সেট সবই রয়েছে এই স্থানটিতে। সংস্কারের জন্য দ্বিতীয় তলা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তা খুলে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় নবাবদের নিজস্ব লাইব্রেরি, অক্ষত বই, বিশাল হল-রুম ও শোয়ার ঘর দেখলে অনুভব হবে আপনি ফিরে গেছেন সেই নবাবী আমলে।
ছবিঃ লেখক
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকেই বাসে করে চলে আসতে পারবেন গুলিস্তানে। এরপর সেখান থেকে বাবু বাজারের বাসে উঠতে হবে। বাসে যেতে না চাইলে রিকশা করে পথটি পাড়ি দিতে পারেন। সরাসরি রিকশা নিয়েও যেতে আহসান মঞ্জিলে। আর এই স্থানটির আশে পাশেও রয়েছে সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা।
আহসান মঞ্জিলের খুব কাছেই আর্মেনিয়ান চার্চ। সারা দিন নিয়ে বের হলে একই দিনে ঘুরে ফেলতে পারেন দুইটি স্থান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও ঐতিহাসিক খ্রিষ্টান স্থাপনার মধ্যে আর্মেনিয়ান চার্চ অন্যতম। এর পুরো নাম ‘আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টলিক চার্চ অফ দি হলি রেসারেকশন’ (Armenian Apostolic Church of the Holy Resurrection)। ঢাকার আর্মানিটোলার কবরস্থানে, ১৭৮১ সালে নির্মিত হয় এই বিখ্যাত চার্চটি। ১৯৯৬ সালে মাদার তেরেসা চার্চটিতে অবস্থান করেন। এছাড়াও আরও নানা বিখ্যাত ব্যক্তি এই চার্চে ভ্রমণ করেছেন।
চার্চটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর পরিবেশ। চার্চটির আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য কবর থাকায় পুরো স্থানটির আবহাওয়াই অন্যরকম। অনেক কবর গুলো খোদাই করা যার ফলকে রয়েছে মর্মস্পর্শী বাণী। এছাড়াও একটি দৃষ্টিনন্দন ভাষ্কর্যও রয়েছে চার্চটিতে। আশে পাশের গাছ-গাছালিতে ঘেরা মনোরম পরিবেশটি বাইরের কোলাহলের তুলনায় অনেকটাই নিরিবিলি। তবে মূল চার্চটি তালাবদ্ধ থাকে বিধায় চার্চ বিল্ডিং এর ভেতরে ঢুকে দেখার তেমন সুযোগ নেই।
ছবিঃ লেখক
আর্মেনিয়ান চার্চের যাতায়াত ব্যবস্থা আহসান মঞ্জিলের মতই। বস্তুত বাবু বাজারের এক দিকে আহসান মঞ্জিল এবং আরেক দিকে আর্মেনিয়ান চার্চ। তবে আর্মেনিয়ান চার্চের ঠিক পাশেই তেমন ভাল কোনো রেস্তোরাঁ নেই।
ঢাকার কবি সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিদের এক অন্যতম তীর্থস্থান এই বিউটি বোর্ডিং।
বিউটি বোর্ডিং মূলত ছিল জমিদার সুধীর দাসের জমিদারবাড়ি। পরবর্তীতে ‘দৈনিক সোনার বাংলা’ এর অফিস ছিল এই ভবনটি। ১৯৫১ সালে অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হলে নলিনী মোহন দাস নামক এক ভদ্রলোক ভবনটি ভাড়া নেন। তার বড় মেয়ের নাম ছিল বিউটি। এরপরেই সেখানে চালু হয় খাবার দোকান এবং ঢাকার সবচেয়ে বিখ্যাত বোর্ডিং, বিউটি বোর্ডিং। ধীরে ধীরে কবি সাহিত্যিকদের প্রধান আড্ডা হয়ে ওঠে বিউটি বোর্ডিং। কবি নির্মলেন্দু গুণ ৫ বছর এই বিউটি বোর্ডিং এ কাটিয়েছেন। এছাড়াও কবি শহীদ কাদরি, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রহমান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, রফিক আজাদ ও চিত্রকার দেবদাস চক্রবর্তী সহ প্রমুখের নিয়মিত চায়ের আড্ডা ছিল বিউটি বোর্ডিং।
বিউটি বোর্ডিং একটি বেশ ছোট ভবন যা নিজেই একটি দর্শনীয় স্থান। ১০টাকার টিকেট কেটে ঢুকতে পারবেন ভবনটিতে। দ্বিতল ভবনটির গাছ-গাছালিতে ভর্তি হওয়ায় খুবই মায়াময় পরিবেশ বিরাজ করে। একটু কাব্যিক ছবি তুলতে চাইলে এর চেয়ে ভাল যায়গা সম্ভবত ঢাকা শহরে আর হয় না।
ছবিঃ লেখক
প্রথমেই বাসে করে চলে আসতে হবে সদর ঘাট তথা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সেখান থেকে হেঁটে অথবা রিকশা নিয়ে সহজেই পৌছাতে পারবেন বিউটি বোর্ডিং। আর খাবারের ব্যবস্থার দিক থেকে এটি এই তালিকার সেরা স্থান। কারণ এটি নিজেই একটি রেস্তোরাঁ। তবে এর রন্ধনশৈলীতে রয়েছে পুরোপুরি পশ্চিম বাংলার ছাপ। যা হয়তো অনেকের কাছে উপাদেয় মনে হলেও, অনেকের কাছে ভাল নাও লাগতে পারে। এছাড়াও খাবারের দামটা সেখানে বেশ বেশিই বলা চলে।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরকে যদি দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন জাদুঘর বলা হয়, তাহলে হয়তো ভুল হবে না।
২০২২ সালে এর পুন:নিমার্ণের কাজ শেষ হলেও এর আসল প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮৭৷ ১৯৯৯ সাল থেকে জাদুঘরটির অবস্থান বিজয় সরণীতে৷
খুবই আধুনিক পরিবেশের এই জাদুঘরটিতে রয়েছে মোট পাচটি গ্যালারি। গ্যালারি গুলো হলো:
-বাংলাদেশ নৌবাহিনী (বেজমেন্ট)
-বাংলাদেশের ইতিহাস (১ম তলা)
-বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (২য় তলা)
-বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (৩য় তলা)
-জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন (৪র্থ তলা)
এই গ্যালারি গুলোতে খুবই চমকপ্রদ উপায়ে সাজানো আছে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে শুরু করে প্রতিটি বাহিনীর নিজস্ব ইতিহাস৷ রয়েছে বিভিন্ন গিয়ার, কামান, হেলিকপ্টারের রেপ্লিকা৷ রয়েছে বিশালাকৃতির রেপ্লিকা মেশিনগানের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেম খেলার সুবিধা৷ এছাড়াই বাংলাদেশের ব্যবহৃত মিং ক্লাস সাবমেরিনের একটি বেশ বড় রেপ্লিকা রয়েছে। সেটির ভেতরে ঢুকে আপনি সাবমেরিনের ইন্টেরিয়র (Interior) উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া রয়েছে আসল বিমান, কামান, আর্মাড ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে নানা যুদ্ধাস্ত্র। এর আরেকটি মূল আকর্ষণ হলো "তোশাখানা জাদুঘর". এটি একটি আলাদা জাদুঘর হলেও একই টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাসে চলে আসবেন বিজয় সরণী। এছাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে নেমে রিকশা নিয়েও যেতে পারেন। খাবারের জন্য আশে পাশে তেমন সুবিধা না থাকলে জাদুঘরের ভেতরেই রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির প্রধান প্রদর্শনীস্থল বলা চলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে। চলুন জানা যাক এর সম্পর্কে বিস্তারিত।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৯৭৪ সালে। এদেশের শিল্পকলাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের একটি বিশেষ আইন দ্বারা প্রতিটি জেলাতেই শিল্পকলা একাডেমি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা বাদে ৬৩টি জেলাতেই রয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত একাডেমিটিকে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলার একাডেমির দর্শনীয় বস্তুর তালিকা কিছু দিন পর পরই পরিবর্তন হয়। সারা বছর জুড়ে চলা নানা ধরনের প্রদর্শনীই এর মূল আকর্ষণ। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নানা প্রদর্শনীও হয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটিতে। ছবি, ভাষ্কর্য, ভিডিওগ্রাফি প্রদর্শনী থেকে শুরু করে জামদানি শাড়ির মেলাও হয় এখানে। এছাড়া এর বাইরের পরিবেশটাও বেশ খোলামেলা ও নিরিবিলি। তবে এখানে ঘুরতে যাওয়ার আগে অবশ্যই এর ফেসবুক পেজ থেকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে যে কোনো প্রদর্শনী চলছে কি না। কারণ বেশির ভাগ দিন বিভিন্ন প্রদর্শনী চললেও মাঝে মাঝে তা বন্ধ থাকে।
ছবিঃ লেখক
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকার সেগুনবাগিচায় হওয়ায় বাসে করে সহজেই আসতে পারবেন। বা মেট্রোরেলে শাহবাগে এসে সেখান থেকে বিহঙ্গ, শিকড়, বিকল্প ইত্যাদি বাসে উঠে মৎস্য ভবনের মোড়ে নামবেন। সেখান থেকে হেটেই যেতে পারবেন শিল্পকলা একাডেমিতে। এছাড়া শাহবাগ থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সরাসরি যেতে পারবেন শিল্পকলায়। আর খাবারের জন্য একাডেমির ভেতরেই রয়েছে বেশ কিছু স্টল। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি খাবার গুলো বেশ সুস্বাদু। দামটাও হাতের নাগালে।
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উদ্যান হলো ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেন।
১৯০৯ সালে বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন বর্তমানের গাজীপুর জেলার বলধা অঞ্চলের জমিদার। এই বাগানটিকে মূলত একটি উদ্ভিদ জাদুঘর বলা চলে। কারণ জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ দেশ-বিদেশের নানা উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এই বাগানটিতে সংরক্ষণ করতেন। বাগানটি এতটাই বিখ্যাত ছিল যে দেশ বিদেশের নানা বিখ্যাত ব্যক্তি এখানে ভ্রমণে আসতেন। এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ বাগান ভ্রমণের সময় নানা বিদেশী ফুলের বাংলা নামকরণ করেন।
স্বভাবতই এই উদ্যানটির দর্শনীয় বস্তু হলো এর বিচিত্র উদ্ভিদরাজী। এই বাগানটি সাইকী ও সিবলী নামের দুইটি ভাগে বিভক্ত। লাল, হলুদ, নীল রঙের বিভিন্ন জাতের শাপলা, ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস, আফ্রিকান টিউলিপ সহ অসংখ্য জাতের ফুল গাছ আছে উদ্যানটিতে। এছাড়াও রয়েছে ফোয়ারা, ভাষ্কর্য ইত্যাদি। এর অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এর জমিদারি ঘাটসমৃদ্ধ পুকুর। এর বসার স্থান গুলো বেশ রাজকীয়। পেছনের গাছ-গাছালি সহকারে বেশ সুন্দর কিছু ছবি তোলাও সম্ভব ঘাটটিতে। এছাড়া নিয়মিত মানুষের আনাগোণা থাকায় পরিবেশটাও সামাজিক।
ছবিঃ লেখক
এর কাছেই আরেকটি আকর্ষণ হলো শঙ্খনিধি হাউজ। শতবর্ষী এই ভবনটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ৩২টি ভবনের একটি। যদিও বর্তমানে এর ভেতরে ঢোকার কোনো সুব্যবস্থা নেই। তবে বলধা গার্ডেন থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই এই শঙ্খনিধি হাউজ। তাই ৫-৭ মিনিট হেঁটে সহজেই দেখে নিতে পারবেন এই শতবর্ষী স্থাপনাটি।
বলধা গার্ডেন রাজধানীর টিকাটুলি বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত। তাই সরাসরি বাসে করেও যেতে পারবেন উদ্যানটিতে। তবে টিকাটুলির বাস না পেলে চলে আসবেন গুলিস্তান মোড়ে। সেখান থেকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া করে চলে যাবেন বলধা গার্ডেনের গেটে। তবে এর আশেপাশে সাধারণ রেস্তোরাঁ ব্যাতীত উল্লেখযোগ্য কোনো খাবার স্থান নেই।
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কটি এই তালিকায় থাকা একমাত্র পার্ক। তার কারণ এর মনোরম ও নিরাপদ পরিবেশ।
রাজধানীর গুলশান এলাকায় অবস্থিত এই পার্কটি এলাকাটির মতই বেশ অভিজাত। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালে নির্মিত হওয়া এই পার্কটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যথেষ্ট যত্ন করেই বানানো হয়েছে এই পার্কটি। ৯ একর যায়গার উপর নির্মিত পার্কটির বর্তমান বৃক্ষ সংখ্যা ১৭০০ এর অধিক।
সাধারণ একটি পার্কের তুলনায় বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্ক বেশ দর্শনীয়। এর পুরো পরিবেশটাই একদম সাজানো গোছানো এবং সুন্দর। পার্কটিতে ঢোকার মুখেই রয়েছে বুক ওয়ার্ম (Book Worm) নামে একটি বইয়ের দোকান। বইয়ের দোকানটি ছবি তোলার জন্য বেশ সুন্দর। এছাড়াও সেখানে পাবেন বিদেশী বইয়ের বেশ বড় একটি সংগ্রহ। সেখান থেকে যেকোনো দিকে হাটতেই বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রয়েছে বসার ও খাবার পানির ব্যবস্থা। সাধারণ এ সকল বস্তুর স্থাপত্যশৈলীও বেশ সুন্দর। এছাড়াও এতে রয়েছে ছোট খাটো একটি জিমনাসিয়াম, বাস্কেট বল কোর্ট, মহিলাদের আলাদা বসার ব্যবস্থা ও ৩টি পুকুরঘাট। লেকের পার ঘেঁষে পানির উপর দিয়েই আছে হাটার পথ। এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো একটি সুবিশাল মুক্তমঞ্চ। সব মিলিয়ে পার্কটি একটি বিকেল কাটানোর জন্য বেশ সুন্দর স্থানই বটে।
ছবিঃলুপ ডিজাইন
গুলশান ২ চত্ত্বর থেকে এটি মাত্র শ’ দুয়েক মিটার দূরে। ঢাকা চাকা, গুলশান ঢাকা ইত্যাদি বাসে করে চলে যাবেন গুলশান ২ এ। সেখান থেকে পায়ে হেটেই বাকি পথটুকু যেতে পারবেন। এছাড়া আশে পাশে রেস্টুরেন্টের কোনো অভাব নেই।
রায়ের বাজার বধ্যভূমি ঢাকার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অন্যতম একটি স্থান। ৩.৫১ একরের স্থানটি কোনো এক ছুটির বিকেলে হতে পারে একটি ভাল ঘোরার স্থান।
রায়ের বাজার অঞ্চলটি মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে এর স্থানীয় কুমোরদের জন্য বিখ্যাত ছিল। মৃৎশিল্পের জন্য এই অঞ্চলের লাল মাটি ছিল ব্যাপক সমাদৃত। মুঘল আমলে এই স্থানটির নাম ছিল ‘কুমোরতলি’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষাংশে ১৪ ডিসেম্বর তারিখে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রায়ের বাজারের ইটখোলায় এনে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে এখানে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ করার উদ্যোগ নেন। ১৯৯৯ সালে এর কাজ শেষ হয়।
যায়গাটির বিশেষ তাৎপর্য হলো দেওয়ালের ভেতর একটি ফাঁকা স্থান। এই ফাঁকা স্থানটি দ্বারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যা কর্তৃক সৃষ্টি হওয়া শূন্যস্থানকে বোঝানো হয়েছে। বধ্যভূমির স্থানটি বেশ সবুজ এবং দৃষ্টিনন্দন। এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খাল একে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে।
ছবিঃউইকিপিডিয়া
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাসে করে চলে আসুন মোহাম্মাদপুর বাসস্ট্যান্ডে। এরপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটেই চলে যেতে পারবেন রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। তবে আশেপাশে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো খাবার ব্যবস্থা নেই।
ঢাকা শহরের জাদুঘর গুলোর মধ্যে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে কম পরিচিত। কিন্তু কিছুটা আড়ালে থাকা এই জাদুঘরটি আপনার সন্তানের জন্য হতে পারে দারুণ একটি শেখার যায়গা।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের শুরুটা এ দেশের স্বাধীনতারও আগে, ১৯৬৫ সালে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে একে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা দেওয়া হয়। যাদুঘরটি বর্তমানে আগারগাঁও এর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। এর মূল ভবনটি ৪ তলা যার চতুর্থ তলায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি অবস্থিত।
জাদুঘর প্রাঙ্গনে ঢুকতেই চোখে পড়বে একটি বিশাল আকৃতির ডাইনোসোর এবং একটি যুদ্ধবিমান। জাদুঘরটির ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে দেখা পাবেন একটি বিশাল পেন্ডুলামের। ধীর কিন্তু নির্দিষ্ট গতিপথে চলমান পেন্ডুলামটির আকার অবশ্যই আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই জাদুঘরে গ্যালারির সংখ্যা ৮টি। প্রতিটি গ্যালারিতেই রয়েছে হাতে কলমে বিজ্ঞানের প্রয়োগ বোঝার ব্যবস্থা। বিজ্ঞানের যে সকল বস্তু আমরা সারা জীবন স্কুলের বইতে পড়ে এসেছি, তার প্রায় সব কিছুরই বাস্তব প্রয়োগ দেখা যাবে বিজ্ঞান যাদুঘরে। পুরোনো আমলের কম্পিউটার, ছাপাখানা থেকে শুরু করে তিমি মাছের কংকালও রয়েছে জাদুঘরটিতে। রয়েছে স্পর্শবিহীন ইলেকট্রিক ট্র্যাকের মডেল, পানির ঘূর্ণন তৈরির মেশিন, বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা দেওয়ার যন্ত্র সহ আরও অসংখ্য দর্শনীয় বস্তু। এর আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যা সম্পর্কে অনেক দর্শকই অবগত নন। সব মিলিয়ে প্রায় সারাদিন কাটানোর জন্য এটি দারুন একটি স্থান।
ছবিঃ লেখক
মেট্রোরেল অথবা বাসে করে চলে আসুন আগারগাঁও এ। সেখান থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়ায় পৌছে যাবেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরে। খাওয়ার জন্য আরেকটু দূরত্ব পাড়ি দিয়ে চলে যেতে পারেন শ্যামলী স্কয়ারে। সব মিলিয়ে যাতায়ের কোনো সমস্যা নেই বললেই চলে।
ভ্রমণ আমাদের মননের অন্যতম খোরাক। গ্লানি ঝেড়ে ফেলতে এবং নতুন অভিজ্ঞতা নিতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। সাপ্তাহিক ছুটিতে দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও আশা করি উপরের ১০টি স্থান আপনাকে হতাশ করবে না।
25-03-2024
Top 10 in Bangladesh
পবিত্র রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের...
Read More18-03-2024
Top 10 in Bangladesh
চলছে রমজান মাস। ধর্মীয় দিক থেকে অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ...
Read More05-03-2024
Top 10 in Bangladesh
শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময় থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোই...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.