Print World Header Banner
বাংলাদেশের বাণিজ্য ও উন্নয়নে চীন নাকি ভারত: কোন দেশ হবে কৌশলগত সঙ্গী?

Description

বাংলাদেশের জন্য চীন ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এক চিরন্তন দ্বন্দ্বের রূপ নিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়নের স্বার্থে কাকে সঙ্গী করা বেশি কার্যকর হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন বারবারই সামনে আসে। সাধারণ নাগরিকদের কাছে এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হলে সাধারণ ধারণা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতি সবসময় জনমতের উপর নির্ভর করে না। এখানে জড়িয়ে থাকে জটিল সমীকরণ এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের বিবেচনা।

চীন ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক। উন্নয়ন খাতেও দুই দেশের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অর্থনীতির অবস্থান ও ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে এখন সময় এসেছে একটি সুস্পষ্ট বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের। এই লেখায় মূলত সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির জন্য ‘চীন নাকি ভারত’ – এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই ভিডিওটির মাধ্যমে।

  • বাংলাদেশের জন্য চীন এবং ভারতের মধ্যে কার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়?

    বাংলাদেশের জন্য চীন এবং ভারত দুটো দেশই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সঙ্গী। তবে, বাংলাদেশের আমদানি খাতে চীনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি এবং তা দেশের মোট আমদানির ৩২.৪%। অন্যদিকে, ভারত বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য হলেও দেশের আমদানির প্রায় ১৬.৭% আসে ভারত থেকে। তাই, বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে, যেন কোনো একটি দেশের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।

  • ভারতের সাথে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির তুলনামূলক চিত্র কী রকম?

    ২০২২ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে তুলা এবং পরিশোধিত তেল অন্যতম। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি ছিল ২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে প্রধান পণ্য ছিল নন-নিটেড কাপড়। বাংলাদেশের রপ্তানিতে ভারতের অবস্থান দশম স্থানে, তবে ভারত বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

  • চীনের সাথে বাংলাদেশের আমদানি এবং রপ্তানির পরিমাণ কী?

    ২০২২ সালে বাংলাদেশ চীন থেকে ২৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার মধ্যে যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। রপ্তানির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি ছিল প্রায় ৯৫২ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে প্রধান পণ্য ছিল নন-নিটেড কাপড়। বাংলাদেশের রপ্তানির তালিকায় চীনের অবস্থান অনেক পেছনে।

  • চীনের ‘লুক ইস্ট’ নীতির ফলে বাংলাদেশের উপর কী প্রভাব পড়েছে?

    চীনের ‘লুক ইস্ট’ নীতির ফলে বাংলাদেশ ভারতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে চীনের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সালের আগে যা ছিল ৪ বিলিয়ন ডলারেরও কম, এখন তা বেড়ে গেছে। এতে করে আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব বেড়েছে এবং শিল্প খাতেও চীনের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

  • চীন ও ভারত কোন খাতগুলোতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী?

    চীন বাংলাদেশে পাওয়ার, স্টিল, ভারী যন্ত্র, অবকাঠামো ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগে সবচেয়ে আগ্রহী, যেখানে ভারতও শক্তি, অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করছে। তবে বিনিয়োগের পরিমাণের দিক থেকে চীন ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

  • বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ চীনের তুলনায় কম হওয়ার প্রধান কারণ কী?

    বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ চীনের তুলনায় কম হওয়ার মূল কারণ ভারতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা। চীন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বেশি উৎসাহী ও সক্ষম এবং চীন তাদের বিনিয়োগে সরাসরি সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিপুল অর্থ ঢালছে। অন্যদিকে, ভারতের বিনিয়োগ অঙ্গীকার বেশি হলেও তার বাস্তবায়ন অনেক কম।

  • বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার চীনে বাড়ানোর প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?

    বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার চীনে বাড়ানোর প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিযোগিতা এবং মাননিয়ন্ত্রণ। চীনের বাজার ধরতে হলে বাংলাদেশকে পণ্যের মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং চীনের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা থাকলেও তা খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।

  • বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব কীভাবে প্রতিফলিত হয়?

    চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত অংশীদার। বিশেষত বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন অঞ্চলে চীন তার প্রভাব ধরে রাখতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এই বিনিয়োগ শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয়, বরং কৌশলগত কারণেও চীন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে।

  • চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর প্রসঙ্গের সাথে তুলনা করা হয় কেন?

    চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয় কারণ, সেখানে চীনের ঋণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধির উদাহরণ আছে। শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় চীন হাম্বানটোটা বন্দরের মালিকানা পেয়েছে। একই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশকে সাবধান হতে হবে যাতে অতিরিক্ত ঋণ বা বিনিয়োগের নির্ভরশীলতা সমস্যার কারণ না হয়।

  • বাংলাদেশ কেন চীন ও ভারতের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়?

    বাংলাদেশ চীন ও ভারতের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় কারণ এককভাবে কোনো একটি দেশের উপর নির্ভরশীল হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়নের জন্য উভয় দেশের সঙ্গই বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থে উপকারী। তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় উভয় দেশের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই সবচেয়ে ভালো সমাধান।

Close
Guitar Foundations: A Step-by-Step Beginner's Journey
MAwbiz.com
Research Methodology & Paper Publication (With SPSS and AMOS basic)