আপনি যদি একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে মনে একটি প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। আর তা হলো, কোন আমলে আপনি এবং আপনার পরিবার ঠিক কেমন সময় কাটিয়েছেন। স্মৃতির পাতা হাতড়ে হয়তো অনেক কিছুই মনে করা সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তির স্মৃতির উপর ভিত্তি করে আসলে একটি সিধান্তে আসা যায় না। তাই তো যুগে যুগে বিশ্বের নানা দেশে ক্রমাগত ব্যবহৃত হয়ে আসছে মিজারি ইন্ডেক্স। যার বাংলা করলে হয় ‘দৈন্য সূচক’। আর এই মিজারি ইন্ডেক্স তথা দৈন্য সূচকের মাধ্যমেই হিসেব করে দেখিয়ে দেওয়া যায়, একটি দেশে একজন সাধারণ নাগরিক কোন সময়ে ঠিক কেমন ছিলেন। আর আজকের লেখায় আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দৈন্য সূচকের মাধ্যমেই ফিরে দেখছি যুগে যুগে এদেশের মানুষের অবস্থান।
বেকারত্ত্বের হার বলতে বোঝায় একটি দেশের বর্তমান শ্রম-শক্তিতে থাকা জনগণের মধ্যে বেকার লোকের পরিমাণ। অর্থাৎ বেকারত্ত্বের হার নির্ধারণের জন্য বর্তমান শ্রম-শক্তির পরিমাণ মুখ্য। দেশের সকল জনগণ এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হন না।
সময়ের সাথে সাথে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়াকেই বলে মুদ্রাস্ফীতি।
দৈন্য সূচক সার্বিক ভাবে একজন সাধারণ নাগরিকের অবস্থান নির্ণয়ের অনেক পুরোনো ও আস্থাযোগ্য প্রক্রিয়া। তবে বর্তমানে আরও আধুনিক ও জটিল প্রক্রিয়ার উদ্ভব ঘটেছে।
২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের মিজারি ইন্ডেক্স ছিল ৪১৪.৭। যা বিশ্বের মাঝে সর্বোচ্চ।
মিজারি ইন্ডেক্স বা দৈন্য সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কিন্ত সার্বিক অবস্থা যাচাই এ অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচক যেমন মাথাপিছু আয়, ব্যাংক ঋণের হার, ইত্যাদি বিশ্লেষণ ব্যাতীত পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।
মিজারি ইন্ডেক্স অথবা দৈন্য সূচক হলো এমন এক ধরনের সূচক যার সাহায্যে নির্দিষ্ট সময়কালে একটি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক ঠিক কতটা দৈন্যদশার সম্মুখীন হয়েছেন তা নির্ধারণ করা হয়। এই সূচকের প্রথম প্রবর্তন ঘটে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ আর্থার মেলভিন ওকুন (Arthur Melvin Okun) এর হাত ধরে।
১৯৭০ এর দশকে আমেরিকার অর্থনীতি নানা চড়াই উতরাই পেরোনো সময় এই সূচকটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সূচকটির মূলনীতি হলো, কোনো দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের দৈন্যদশা সেই দেশটির বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতির হারের যোগফলের সমান।
মিজারি ইন্ডেক্স বা দৈন্য সূচক সাধারণত দুইটি জিনিসের যোগফল। বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতি। খুব স্বাভাবিক ভাবে এই দুইটির শতকরার হারকে যোগ করে দিলেই বের হয়ে যায় দৈন্য সূচক। আর এই সূচকটির মান যত বেশি, একজন সাধারণ নাগরিকের দৈন্যদশার পরিমাণ ততটাই বেশি।
বাংলাদেশের দৈন্য সূচকের পরিমাপ শুরু ১৯৯১ সাল থেকে। কারণ দৈন্য সূচক নির্ণয় করতে যে দুই ধরনের উপাত্তের প্রয়োজন, তা বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকেই রেকর্ডকৃত। নিরপেক্ষতা রক্ষায় এ লেখায় ব্যবহৃত দুইটি উপাত্তই নেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ডাটা ব্যাংক থেকে।
সে সময় তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুই রাজনৈতিক প্রধানের কারাবাস এবং সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও বেকারত্ব অনেক বেড়ে যায়। ফলে গড় দৈন্য সূচকও অনেক বাড়ে। তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে ২০০৭-২০০৮ ছিল গ্রেট ডিপ্রেশনের পর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সে সময়টিই ছিল সর্বোচ্চ দৈন্য দশার সময়।