বম্বে সুইটস এর শুরুটা দেশভাগের পরপরই, ১৯৪৮ সালে। বম্বে সুইটস এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জিভানি পরিবারের নাম। জিভানি পরিবারের তৎকালীন প্রধান মিস্টার জিভানি এর মিষ্টির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থেকেই শুরু হয় বম্বে সুইটস এর যাত্রা। নামের সাথে মিল রেখে প্রথম পর্যায়ে এটি আসলেই ছিল একটি মিষ্টির দোকান।
পুরানো ঢাকার নওয়াবপুর রোডের দোকানে থরে থরে সাজানো থাকতো মুখে জল আনা হরেক রকমের মিষ্টি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সে সময়ের লাড্ডু, বরফি, প্যারা এবং রসগোল্লা। তবে এ সকল মিষ্টির পাশাপাশি জিভানি সাহেব আরেকটি খাদ্যদ্রব্য বেচতেন যা দোকানটির সুখ্যাতিতে অনেক বড় প্রভাব রেখেছিলো। সেই খাদ্যবস্তুটি ছিল জারভর্তি চানাচুর। মূলত একেবারেই কুটির পর্যায়ের শিল্পের উপর ভিত্তি করে যাত্রা শুরু বম্বে সুইটস এর। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকার বাইতুল মোকাররাম এবং নিউ মার্কেট এলাকায় গড়ে ওঠে বম্বে সুইটস এর দোকান। ১৯৫০ এর দশক এবং তার পরবর্তী সময়ে চানাচুরই হয়ে ওঠে বম্বের সুইটস এর প্রধান পণ্য।
‘পটেটো ক্র্যাকারস’, নামটি শুনলেই যেন ছোটবেলার এক গাদা স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুপরিচিত চিপসের স্থানটি এই ’পটেটো ক্র্যাকারস’ ই দখল করে রেখেছে। আর এই অনবদ্য পণ্যটির পেছনেই রয়েছে বম্বে সুইটস নামক দেশীয় এক কোম্পানির বেড়ে ওঠার গল্প। পটেটো ক্র্যাকারস এর পাশাপাশি নানা ধরনের জনপ্রিয় চিপস ও জুসের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত একটি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে এই বম্বে সুইটস। কিভাবে একটি মিষ্টির দোকান থেকে এত বড় কোম্পানির জন্ম, আর কেমনই বা ছিল সেই চলার পথ, সে কথাই থাকছে আজকের এই ভিডিওতে।
বম্বে সুইটস এর শুরুটা মিষ্টি এবং চানাচুর দিয়ে হলেও বর্তমান প্রজন্ম একে সবচেয়ে বেশি চেনে এর প্যাকেটজাত চিপস এর জন্য। কারণ এই বম্বে সুইটসই বাংলাদেশের বাজারে সর্বপ্রথম প্যাকেটজাত চিপস নিয়ে আসে। ১৯৮৫ সালে চালু হওয়া এই চিপসটির নাম ছিল রিং চিপস।
বম্বে সুইটস এর শুরুটা দেশভাগের পরপরই, ১৯৪৮ সালে। বম্বে সুইটস এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জিভানি পরিবারের নাম। জিভানি পরিবারের তৎকালীন প্রধান মিস্টার জিভানি এর মিষ্টির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থেকেই শুরু হয় বম্বে সুইটস এর যাত্রা।
বাজারে বম্বে সুইটস এর অনেক ধরনের পণ্য থাকলেও মূলত চিপসের সাহায্যেই বাজার দখল করেছে বম্বে সুইটস। পটাটো ক্রাকার্স কোম্পানিটির সবচেয়ে সফল পণ্য। তবে চিপসের পাশাপাশি অন্য কোনো পণ্য যদি বম্বে সুইটস এর সফলতায় শক্ত প্রভাব ফেলে থাকে, সেটি চানাচুর।
বাজারে অনেক কোম্পানির মুড়ি ভাজা থাকলেও বম্বে সুইটস এই পণ্যটি দীর্ঘদিন বাজারজাত করে নি। কারণ আর কিছুই নয়, মুড়ি ভাজার সময় ব্যবহৃত বালু মুড়িতে থেকে যায়, যা হতে পারে গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। পরবর্তীতে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি মুড়ি ভাজা বাজারজাত করা শুরু করে বম্বে সুইটস।
এরিয়া সেলস ম্যানেজার থেকে শুরু করে অ্যাসিসেন্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজারের ন্যায় নানা পদের বিজ্ঞপ্তী দেশীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
সাপ্লাই চেইনের ভাষায় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পার্টিকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। সাপ্লায়ার থেকে উৎপাদনকারী অবধি অংশটিকে বলে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি। আর উৎপাদনকারী থেকে গ্রাহক অবধি পৌছানো পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশটিকে বলে ফরোয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি। বম্বে সুইটস এর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি প্রায় পুরোটাই নিজস্ব মালিকানাধীন।
প্রথমত পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে বম্বে সুইটস এরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘বম্বে এগ্রো লিমিটেড’ থেকে। অর্থাৎ সকল আলু, চাল, বাদাম থেকে শুরু করে সকল কৃষি পণ্য বম্বে সুইটস নিজেরাই উৎপাদন করে। এছাড়াও এ সকল শস্য সংরক্ষণের জন্য রয়েছে বিশালাকৃতির হিমাগার। ফলে প্রতিটি কাঁচামালের গুণগত মানও বজায় থাকে সহজেই।
বাজারজাত পণ্য যাতে বেশিদিন ভাল থাকে, তাই বম্বে সুইটস এর সকল পণ্য নিজস্ব কারখানাতেই প্যাকেজিং করা হয়। এজন্য বম্বে সুইটস এর মালিকানাধীন আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার নাম ট্রাইসপ্যাক (Tricepack) লিমিটেড। ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি বম্বে সুইটস এর প্যাকেজিং করে আসছে।
বোম্বে সুইটসের বর্তমানে ১৮ প্রকারের প্যাকেটজাত চিপস, ১১ প্রকারের চানাচুর, ৪ প্রকারের বেভারেজ, ৬ প্রকারের মশলা, ৪ প্রকারের ফ্রোজেন ফুড রয়েছে।
বোম্বে সুইটসের বর্তমান চেয়ারম্যান মিঃ সেলিম জিভানি।