শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে আজকাল চাকরি জোটানো দায়। সঙ্গে অভিজ্ঞতার সনদও থাকা চাই। বলতে পারেন পড়াশোনা শেষে চাকরি পেলে তবেই তো হবে ‘অভিজ্ঞতা’! কিন্তু এমন কিছু পেশাগত কোর্স রয়েছে, যা আপনাকে নিয়ে যাবে অভিজ্ঞদের কাতারে। তেমনি একটি কোর্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি বা সিএ। বাংলাদেশে হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাগত এই ডিগ্রি দিয়ে থাকে আইসিএবি।নির্বাহী থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যাওয়ার পথটি দীর্ঘ। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী কয়েক বছরের মধ্যে সিএ সনদধারী হয়ে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী পদে যোগ দেন। সিএ কোর্সে হিসাবরক্ষণ, হিসাব নিরীক্ষা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ আছে।চাকরি করতে না চাইলে নিজেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খুলে পরামর্শ সেবা দিতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কাজও করতে পারেন তাঁরা। এই ভিডিওতে আমরা কীভাবে বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়ে উঠতে পারি সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি ।
উত্তরঃ এটি যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পেশাগত দক্ষতার সনদ, তাই সব সময়ই এই ডিগ্রিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস ইন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের (আইসিএইডব্লিউ) পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশেও এর শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়। সারা বিশ্বেই সিএ ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশে ডিগ্রির চাহিদা বেশি। করপোরেট ও বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী সিএ ডিগ্রিধারী পেশাজীবীর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশেও যথেষ্ট কাজের সুযোগ আছে।
সাধারণ আর্টিক্যালশিপ শেষ করে বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রে একজন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টের প্রাথমিক বেতন ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা হতে পারে। এ ছাড়া সিএর বিভিন্ন পার্ট পাস করার পর বেতন শুরুতে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এবং পুরো সিএ কোর্স সম্পন্ন করার পর শুরুতে বেতন ৭০ হাজার হতে পারে।
উত্তরঃ পড়ালেখায় বিরতি থাকলেও আপনি সিএ ডিগ্রির জন্য ভর্তি হতে পারবেন। তবে ন্যূনতম যোগ্যতার শর্ত আপনাকে পূরণ করতে হবে। এমন অনেক শিক্ষার্থীই আছেন, যারা হয় ১০-১৫ বছর আগে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন কিংবা শিক্ষাবিরতিতে আছেন, তাঁরা সিএ পড়ছেন। আবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, তাঁরাও সিএ ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারেন।
উত্তরঃ অনেকে মনে করেন, সিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন। সিএ পড়তে ধৈর্য ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা দুনিয়ার কাজের ধরন প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল বলে সিএ শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে হয়। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জকে যাঁরা রোমাঞ্চকর মনে করেন, তাঁদের জন্য পড়ালেখাটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। অন্যান্য পরীক্ষার মতোই সিএ পরীক্ষা পাসের জন্য দরকার একাগ্রতা ও নিয়মানুবর্তিতা। ৩-৫ বছরের মধ্যে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইসিএবির সনদধারী চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু আর্টিকেলশিপ শেষ করে সার্টিফিকেট লেভেল পরীক্ষায় পাস করেও কাজ করা যায়। এ ছাড়া কোর্স সমাপনী ও পরীক্ষায় পাশের ওপর নির্ভর করে রেজিস্টার্ড অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান (আরএটি) ও সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্টিং প্রফেশনাল (সিএপি) সনদ পাওয়ার সুযোগ আছে।
সিএ পড়াশুনার দুইটি ধাপ। থিওরিটিক্যাল ধাপ এবং ব্যবহারিক ধাপ। দুইটি ধাপেই একই সঙ্গে পড়াশুনা করতে হবে। থিওরিটিক্যাল ধাপে তিনটি লেভেলে মোট ১৮টি বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর ব্যবহারিক ধাপে একজন শিক্ষার্থী আর্টিকেলশিপ সম্পন্ন করতে হবে। একাডেমিক পড়াশোরার ওপর ভিত্তি করে আর্টিকেলশিপ হতে পারে দুই থেকে চার বছর।
উত্তরঃ সিএ ফার্ম হল মূলত অডিটর প্রতিষ্ঠান। এরা আইসিএবি (দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের) অধীন সদস্য সংগঠন। আর, আইসিএবি হল পুরো সিএ প্রফেশনের জন্যে সরকারি আইন দ্বারা গঠিত, বাণিজ্য মণত্রণালয়ের অধীন একমাত্র রেগিউলেটরি ক্ষমতাপ্রাপ্ত অথরিটি।
উত্তরঃ হ্যাঁ আছে ৷ যেসব ফার্মের Global Affiliation রয়েছে তারা এ ধরণের সুযোগ প্রদান করে থাকে ৷ যেমন রহমান রহমান হক চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ফার্ম থেকে KPMG Global Mobility Service এর মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে KPMG Qatar, KPMG USA সহ অন্যান্য দেশের ফার্মগুলোতে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
উত্তরঃ এটি ডিপেন্ড করে আপনার ফার্ম ক্লায়েন্টকে কোন ধরণের সার্ভিস প্রদান করে তার ওপর ৷ সব ধরণের ফার্মই Audit এবং Accounts এর কাজ করে থাকে ৷ এছাড়া প্রথম সারির ফার্মগুলোর কার্যপরিধি অনেক বিস্তৃত হয়ে থাকে ৷ যেমন Big Four (Deloitte,PwC,EY,KPMG) এর ফার্মগুলো সাধারণত Financial Accounting, Reporting, Financial Auditing, Tax services, Cash Incentive Certification, Advisory services, Due Diligence Services, Management Consultancy, BPO services, ERP Implementation ইত্যাদি কাজ করে থাকে ৷
উত্তরঃ সিএ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে আর্টিকেলশিপ করতে হবে ৷ আর্টিকেলশিপ হল একটি সিএ ফার্মের অধীনে থেকে হাতে কলমে একাউন্টিং, অডিট, ট্যাক্স ইত্যাদি শেখা এবং ক্লায়েন্টকে এজাতীয় সার্ভিস প্রদান করা ৷ HSC এর পরে গেলে ৪বছর, Graduation করে গেলে ৩ বছর, আইসিএমএবি বা এসিসিএ এর মেম্বার হিসেবে গেলে ২ বছর ফার্মে কাজ করতে হবে ৷নির্দিষ্ট আর্টিকেলশিপ পিরিয়ড শেষ করলে ফার্ম থেকে কোর্স কম্প্লিট/সিসি সার্টিফিকেট দেয়া হয় ৷ এর সাথে পরীক্ষা পাসের কোন সম্পর্ক নেই ৷ আগে শুধু সিসির ভাল ডিমান্ড ছিল, তবে এখন সিসির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ভ্যালু কমতে শুরু করেছে ৷
একজন ভাল প্রফেশনাল একাউন্ট্যান্ট হতে আর্টিকেলশিপের গুরুত্ব অপরিসীম ৷ এই সময়টাকে যে যত বেশি কাজে লাগাতে পারবে, এই সেক্টরে তার অভিজ্ঞতা তত বাড়বে এবং পরবর্তী কর্মজীবনে তার সফল প্রয়োগের মাধ্যমে একটা sustainable ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব ৷