যে কোনো দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার প্রথম শর্ত হল আইনগত বৈধতা। আর এ বৈধতার প্রাথমিক ধাপ হল ট্রেড লাইসেন্স। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন কিংবা নতুন করে ব্যবসা শুরু করে থাকেন তবে নিজের একটি ট্রেড লাইসেন্স থাকা আবশ্যক।
আইনগত বৈধতা ছাড়াও ব্যবসায়িক পরিচালনার প্রতি পদক্ষেপেই এটির প্রয়োজন রয়েছে। যেমন: ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলা, লেনদেন, চুক্তি, ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে বিদেশ ভ্রমণ, এবং ভ্যাট প্রদান।
এই ভিডিওতে আমরা ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করতে হয়, ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে, ট্রেড লাইসেন্স এর ফি কত , একটি ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ কতদিন ইত্যাদি আরো নানা প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত দেয়ার চেষ্টা করবো।
উত্তরঃ ব্যবসায় কাজের প্রথম ধাপ হলো ট্রেড লাইসেন্স। ট্রেড লাইসেন্স হলো ব্যাবসার অনুমতি পত্র। বৈধ ভাবে যেকোনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক ।
সাধারণত সিটি কর পোরেশন ও মেট্রো পলিটন এলাকার বাইরে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা বা জেলা পরিষদ এই লাইসেন্স প্রদান করে থাকে । ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার যোগ্য নয় । লাইসেন্স প্রদান কারী কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হবে আপনার ব্যবসার অবস্থান অনুযায়ী । ব্যবসার অবস্থান যদি ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তবে আপনা কে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন থেকে এটি সংগ্রহ করতে হবে । ব্যবসার অবস্থান সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে হলে, সংশ্লিষ্ট পৌরসভা , উপজেলা পরিষদ অথবা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে এই License সংগ্রহ করতে হবে ।
উত্তরঃক) সিটিকরর্পোরেশন, খ) পৌরসভা, গ) ইউনিয়নপরিষদ ঘ)পৌরসভা ঙ) উপজেলা বা জেলা পরিষদ এর যেকোন একস্থান থেকে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে ।
উত্তরঃ নির্ধারিত আবেদন ফর্মে ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হয় । উদ্যোক্তার আবেদনের ভিত্তিতে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে । আবেদন ফরম এর সাথে উদ্যোক্তা কে কিছু কাগজ পত্র জমা দিতে হয়। ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আবেদন এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিতে হয় ।
সাধারণ ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে
o নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে ।
o ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর স্থান ব্যক্তি গত হলে সিটি কর্পোরেশনের হাল নাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ, নিজের দোকান হলে ইউটিলিটিবিল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় হলে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ভাড়ার চুক্তিপত্রে সত্যায়িত ফটোকপি।
o আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
o ব্যবসা যদি যৌথভাবে পরিচালিত হয় তাহলে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে পার্টনারশিপের অঙ্গীকারনামা/শর্তাবলী জমা দিতে হবে ।
ফ্যাক্টরির ট্রেড লাইসেন্স এরক্ষেত্রে
o পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্রের কপি ।
o প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান/স্থাপনার বিবরণ সহ নকশা/লোকেশন ম্যাপ ।
o প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/কারখানার পাশ্ববর্তী অবস্থান/স্থাপনার মালিকের অনাপত্তি নামা ।
o ফায়ার সার্ভিস এর ছাড় পত্র।গ) সিএনজি ষ্টেশন/দাহ্য পদার্থ ব্যবসার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর/ফায়ার সার্ভিস ওপরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র/অনুমতিপত্র
o ক্লিনিক/প্রাইভেট হাসপাতালের ক্ষেত্রে ডিরেক্টর জেনারেল – স্বাস্থ্য, কর্তৃক অনুমতি পত্র
o লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অবআর্টিকেল অথবা সার্টিফিকেট অবইন কর্পোরেশন
o প্রিন্টিংপ্রেস এবং আবাসিক হোটেল এর ক্ষেত্রে ডেপুটিকমিশনার, কর্তৃকঅনুমতিপত্র
o রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে মানব সম্পদ রপ্তানী ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স
o অস্ত্র ও গোলা-বারুদ এর ক্ষেত্রে অস্ত্রের লাইসেন্স
o ঔষধ ও মাদক দ্রব্যের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্স এর কপি
· o ট্রাভেলিংএজেন্সিরক্ষেত্রেসিভিলএভিয়েশনকর্তৃপক্ষেরঅনুমতি।
উত্তরঃ নারী, পুরুষ উভয়ই ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে তবে অবশ্যই তাকে কোন না কোন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে হবে। বয়স ১৮ বছর এর উপরে হতে হবে ।
উত্তরঃ না একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একটি ব্যবসার জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ যে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয় শুধু সেই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা যাবে অন্য কোন ধরনের ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা যাবে না । নতুন কোন ব্যবসা শুরু করলে তার জন্য নতুন ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে ।
উত্তরঃ না একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একজন ব্যবসায়ী /উদ্যোক্তা ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী /উদ্যোক্তার নামে ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয়েছে এটি শুধু তার জন্যই প্রযোজ্য । এটা কোন ভাবেই হস্তান্তর যোগ্য নয় ।
উত্তরঃ একটি লাইসেন্স পেতে ৩-৭ দিন সময় লাগতে পারে ।
উত্তরঃ যে অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়, সেখান থেকেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত ১ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়। প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। পুরানো ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়ে নতুন করে ট্রেডলাইসেন্স নবায়ন করতে হয় ।
উত্তরঃএকটি ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ এক অর্থ বছর। অর্থাৎ জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়ে পরের বছরের জুন মাসের ৩১ তারিখ শেষ হবে। শেষ হলে নবায়ন ফি দিয়ে আপনাকে লাইসেন্স নবায়ন করে নিতে পারবেন। আপনি যখনি ট্রেড লাইসেন্স করান না কেন জুলাইতে আবার নবায়ন ফি দিতে হবে।
লাইসেন্স নবায়ন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এ জন্য আগের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর কর্মকর্তা নবায়নকৃত লাইসেন্স প্রদান করবেন। লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্স ফির সমান। এই ফি আগের মতোই ফরমে উল্লিখিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
যদি সময়মত লাইসেন্স নবায়ন না করা হয় তাহলে আপনার ব্যবসার আইনগত বৈধতায় প্রশ্ন থেকেই যায়।
উত্তরঃ ফি প্রদান ও এফিডেভিটের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য রিবর্তন করা যায় । তবে এক অর্থ বছরে ব্যবসায়িক ঠিকানা DNCC থেকে DSCC বিপরীতে পরিবর্তন হলে ঠিকানা পরিবর্তন করা যায় না । সেক্ষেত্রে নতুন অর্থ বছরে নতুন ঠিকানা সহ নতুন লাইসেন্স করে নিতে হবে । যদি একই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তিত হয় তাহলে যেকোন সময়ই তা পরিবর্তন করা যাবে ।
উত্তরঃ এক ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে কাছাকাছি ক্যাটাগরির ভিন্ন ব্যবসা করা যায়, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্সে ভিন্ন ক্যাটাগরি যোগ করতে হবে এবং সেই ক্যাটাগরির লাইসেন্স ফি যোগ করতে হবে ।যেমন আপনি IT ক্যাটাগরি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে পরবর্তীতে Software ক্যাটাগরি যোগ করতে পারবেন ফি প্রদান সাপেক্ষে।বর্তমানেই-কমার্স ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স IT বা Software ক্যাটাগরি দিয়ে করা হয়।তবে কাছাকাছি ক্যাটাগরির ব্যবসানা হলে অবশ্যই সেই ব্যবসার আলাদা ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে।
একটি ট্রেড লাইসেন্স এর অধীনে বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি করা যায়। সেক্ষেত্রে ক্যাটাগরি হবে জেনারেল সাপ্লায়ার ।
উত্তরঃ একটি ট্রেড লাইসেন্স একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবেন না । একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু একজন ব্যবসায়ী / উদ্যোক্তা ব্যবহার করতে পারবেন । অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী / উদ্যোক্তার নামে ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয়েছে এটি শুধু তার জন্যই প্রযোজ্য । এটা কোনো ভাবেই হস্তান্তর যোগ্য নয় ।
উত্তরঃ হ্যাঁ পারে, সেক্ষেত্রে দুজনের ছবি ও তথ্যের প্রয়োজন হবে।
উত্তরঃ একজন ব্যক্তির একাধিক ট্রেড লাইসেন্স থাকতে পারে এবং তা একই ঠিকানা বা ভিন্ন ঠিকানা হতে পারে।
উত্তরঃ মিথ্যা বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে, লাইসেন্সে উল্লিখিত শর্তাবলি এবং সিটি করপোরেশনের আইন ও বিধি মেনে না চললে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
এছাড়া লাইসেন্স গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে যে কোনো ব্যবস্থানেওয়ার আগে গ্রহীতা কে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে।
NB:তথ্যাদি সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লিপি বদ্ধ করা হয়েছে। যে কোন সরকারী সিদ্ধান্তের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজনের কারণে এই তথ্য গুলো অকার্যকর বিবেচিত হতে পারে।