Print World Header Banner
জমি কেনার আগে এবং পরে যে সকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে l Things to consider before buying a land

Description

এক খণ্ড জমির মালিক হওয়া প্রতিটি মানুষেরই মনের একটি অদম্য কামনা। কিন্তু এই মনের বাসনা পূরণ করতে গিয়ে মানুষ অনেক সময় এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে,কোনটি সঠিক কিংবা কোনটি ভুল তা বুঝে উঠতে পারে না। তাছাড়া জমি নিয়ে বিরোধ ও প্রতারণা যেনো সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। জমির দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে বায়না ও জমি হস্তান্তর প্রত্যেকটি প্রক্রিয়ার সাথেই ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে প্রতারণা। কেবল আইন দিয়ে এর নিবারণ সম্ভব নয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা ও সেই সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত সচেতনতার মাধ্যমেই এর থেকে মুক্তি সম্ভব। আর তাই এই ভিডিওতে জমি কেনার আগে এবং পরে বা কেনার সময় যা করনীয় সেই বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে।

  • প্রশ্ন ১: জমি কেনার আগে ও পরে ক্রেতার কি কি বিষয় লক্ষ্য করা উচিৎ?

    উত্তরঃ জমি কিনতে যাচ্ছেন? জমি কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে জমি বিক্রেতার মালিকানা এবং জমির বিভিন্ন দলিল ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে; নইলে পড়তে পারেন বিপদে, এমনকি প্রতারিতও হতে পারেন । জমি কেনার প্রধান ও পূর্বশর্ত হচ্ছে ক্রেতা হিসেবে আপনাকে সাবধান এবং সচেতন হতে হবে। হুট করে দলিলপত্রাদি যাচাই না করে জমি কেনা উচিত নয়। অনেক সময় দালালদের কথায় প্ররোচিত হয়ে জমি কিনতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ার ঘটনাও অহরহ দেখা যাচ্ছে।

    এজন্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতারা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে পারেন-

    ১) জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে। 

    ২) জমির তফসিল অর্থাৎ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ জানতে হবে। 

    ৩) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সি,এস; এস,এ; আর,এস পর্চা দেখাতে হবে। 

    ৪) বিক্রেতা ক্রয় সুত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয়ের দলিল/ভায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে। 

    ৫) বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান বিক্রেতা বা তিনি যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তার নামে অস্তিত্ব (যোগসুত্র) মিলিয়ে দেখতে হবে। 

    ৬) জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার নিকট রক্ষিত মাঠ পর্চা যাচাই করে দেখতে হবে। যদি মাঠ পরচার মন্তব্য কলামে কিছু লেখা থাকে যেমন: মন্তব্য কলামে (AD) এভাবে লেখা থাকলে বুঝতে হবে অত্র খতিয়ানের বিরুদ্ধে তসধিক পর্যায়ে আপত্তি আছে। এরূপ জমি ক্রয়ের আগে জরিপ অফিস / ক্যাম্পে গিয়ে উক্ত জমিটির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে হবে। 

    ৭) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরীকদের সঙ্গে বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টন নামা (ফারায়েজ) দেখে নিতে হবে। 

    ৮) বিক্রেতার নিকট থেকে সংগ্রহিন দলিল, খতিয়ান / পর্চা ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারি /স্বত্বলিপি রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। 

    ৯) সর্বশেষ নামজারি পর্চা ডি, সি, আর খাজনা দাখিল (রসিদ) যাচাই করে দেখতে হবে। জমির খাজনা বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনাসহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায় ক্রেতার। 

    ১০) বিবেচ্য জমিটি সার্টিফিকেট মোকদ্দমা ভুক্ত কি না, কখনও নিলাম হয়েছে কি না তা তফসিল অফিস / উপজেলা ভূমি অফিস হতে জেনে নিতে হবে। সার্টিফিকেট মামলা ভুক্ত সম্পত্তি বিক্রয় যোগ্য নয় ( সরকারি দাবি আদায় আইন ১৯১৩ এর ৭ ধারা ) 

    ১১) বিবেচ্য ভূমি খাস, পরিত্যক্ত / অর্পিত (ভি পি) , অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্যে নোটিশকৃত কি না তা তফসিল, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে। 

    ১২) বিবেচ্য ভূমি কোনো আদালতে মামলা মোকদ্দমা ভুক্ত কি না তা জেনে নিতে হবে। মামলা ভুক্ত জমি কেনা উচিত নয়।

     ১৩) বিবেচ্য জমিটি সরেজমিনে যাচাই করে এর অবস্থান নক্শার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং দখল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে বিক্রেতার মালিকানা ও দখল নিশ্চিত হতে হবে। 

    ১৪) সব রেজিস্টারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে জমির সর্বশেষ বেচা কেনার তথ্য জেনে নেয়া যেতে পারে। ১৫) প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোন ব্যাংক / সংস্থার নিকট দায়বদ্ধ কি না। 

    ১৬) প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কি না তাও দেখা প্রয়োজন। 

    ১৭) কোনো কোনো এলাকায় জমিতে নানা ধরনের বিধি নিষেধ থাকতে পারে যেমনঃ ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার নিম্নোক্ত মৌজাসমূহের ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি জমিতে শিল্প / কারখানা / ইমারত সহ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, কৃষি, দুগ্ধ ও মৎস্য খামার ইত্যাদি স্থাপন না করার জন্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় ২২/১১/৯৯ ইং তারিখে ১৪/৯৪/৯৮৮ নং স্মারকে একটি পরিপত্র জারি করে। তাই এ সকল বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জমি কেনা উচিত। 

    জমির দলিল ঠিক আছে কি না দেখুন জমির বিভিন্ন প্রকার দলিল থাকতে পারে। বিক্রীত দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান—সবই হচ্ছে দলিল। ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সব শেষে যে দলিল করা আছে, তার সঙ্গে পূর্ববর্তী দলিলগুলোর মিল আছে কি না। বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়। ধরা যাক, Mr.X কিছু জমি 2005 সালে ৫০৬ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কেনেন। সেই জমি ২০০৭ সালে অন্য একজনের কাছে ৪০১ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। তাহলে আগের ৫০৬ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া দলিল। বিক্রেতার কাছ থেকে ভায়া দলিলটি চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের দলিল নম্বর ঠিক আছে কিনা। আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কি না। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভল্যুমে লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। কোনো দলিল খুঁজে বের করাকে সাধারণত সার্চ বলা হয়। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাব-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকি দলিল, বায়না দলিল, বণ্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে

     

     

     

  • প্রশ্ন ২: জমি কেনার পরে কী কী বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে?

    উত্তরঃ নিজ জমির ব্যবস্থাপনা অনেকেই আমরা জমি কিনে ফেলে রাখি। কোন খোঁজ-খবর রাখিনা। কালে ভদ্রে যাই। অনেকে কখনও যাইনা। এটি একটি মারাত্মক ভুল। এর ফলে জমি নিয়ে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বা জমিবেহাত হয়ে যেতে পারে। জমি ফেলে রাখলে সংলগ্ন জমির মালিক বা আগের মালিক বা তার ওয়ারিশরা কিংবা অন্য যে কেউই ঐ জমি বেদখল করে নিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জাল দলিল তৈরী করে জমিবিক্রি করে দেয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। ছিন্নমূল মানুষও ঘর বা দোকান বানিয়ে দিব্বি ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে বসে। জমি না চেনার বা অবস্থান না জানার জন্য মালিকের মৃত্যুর পর তার ছেলে-মেয়ে বা ওয়ারিশগণঐ জমির খোঁজ পান না। জমির খোঁজ খবর না রাখার জন্য এরকম নানা জটিল সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। 

     
  • প্রশ্ন ৩: জমি কেনার পর করণীয়ঃ

    ১। কেনার সময়ই জমি মেপে দখল বুঝে নিন। মাপার সময় সম্ভব হলে সংলগ্ন জমির মালিকসহ ২/১ জন প্রতিবেশীকে উপস্থিত রাখুন;

    ২। জমি কেনার পর নিজের পরিবার পরিজন, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে মাঝে মাঝে দেখতে যান। যাতে করে পরবর্তীতে ঐ জমির অবস্থান চিহ্নিত করতে কোন সমস্যা না হয়;

    ৩। জমি কেনার পর অবশ্যই সীমানা প্রাচীর (boundary wall) দিতে হবে, সেটি পাকা হোক বা কাঁচা;

    ৪। মালিকানার বিবরণসহ সাইনবোর্ড টাঙ্গাবেন;

    ৫। একইসাথে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এসি (ল্যান্ড) অফিসে গিয়ে নামজারী করাবেন এবং হালসন পর্যন্ত সকল খাজনা পরিশোধ করবেন। নামজারীর পড়চা, ডিসিআর এবং খাজনার রশিদ সাবধানে রাখবেন।প্রয়োজনে একাধিক ফটোকপি করে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সংরক্ষণ করবেন। মনে রাখবেন, ডিসিআর বা খাজনার রশিদ হারিয়ে গেলে তা পুনরায় পাওয়া যায়না। এগুলো একবারই ইস্যু করা হয়।

    ৬। জমি ব্যবহার না করে খালি ফেলে না রাখা উচিৎ নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে ঘর বা প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য কোন স্থাপনা তৈরী করতে হবে বা কৃষি কাজ, বাগান ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করতে হবে;

    ৭। জমি দেখাশোনার জন্য যতটা সম্ভব নিয়মিত যেতে হবে। সম্ভব হলে দেখাশোনার জন্য কোন বিশ্বস্ত লোক রাখতে হবে;

    ৮। প্রতিবেশী এবং আশেপাশের জমির মালিকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করতে হবে।

    ৯। কোন বিষয়ে সমস্যা হলে প্রথমে স্থানীয়ভাবে সেটা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। সমাধান না হলে নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

     

     

     

Close
Guitar Foundations: A Step-by-Step Beginner's Journey
MAwbiz.com
Research Methodology & Paper Publication (With SPSS and AMOS basic)